আরো যে, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তাঁরদিকে ফিরে আস [১], তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট কালের এক উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন [২] এবং তিনি প্রত্যেক গুণীজনকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দান করবেন [৩]। আর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর মহাদিনের শাস্তির আশংকা করি।
____________________
[১] অর্থাৎ আমি তোমাদেরকে পূর্ববর্তী যাবতীয় গুণাহ হতে ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর দরবারে ফিরে আসার আহবান জানাই। এবং ভবিষ্যতে একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকার প্রচেষ্টা চালাতে বলি। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, কারণ আমি দিনে একশত বার তার কাছে তাওবা করি। [মুসলিম: ২৭০২]
[২] অর্থাৎ দুনিয়ায় তোমাদের অবস্থান করার জন্য যে সময় নির্ধারিত রয়েছে সেই সময় পর্যন্ত তিনি তোমাদের খারাপভাবে নয় বরং ভালোভাবেই রাখবেন। তাঁর নিয়ামতসমূহ তোমাদের ওপর বর্ষিত হবে। তাঁর বরকত ও প্রাচুর্য লাভে তোমরা ধন্য হবে। তোমরা সচ্ছল ও সুখী-সমৃদ্ধ থাকবে। তোমাদের জীবন শান্তিময় ও নিরাপদ হবে। তোমরা লাঞ্ছনা, হীনতা ও দীনতার সাথে নয় বরং সম্মান ও মর্যাদার সাথে জীবন যাপন করবে। এ বক্তব্যটিই সূরা নাহ্‌লের ৯৭নং আয়াতে এভাবে বলা হয়েছেঃ “যে ব্যক্তিই ঈমান সহকারে সৎকাজ করবে, সে পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো।” অনুরূপভাবে এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যাই খরচ করবে তাতেই আল্লাহ্‌র কাছ থেকে এর জন্য সওয়াব পাবে। এমনকি যা তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তাতেও"। [বুখারীঃ ৫৬, মুসলিমঃ ১৬২৮] আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ "যদি কেউ গুণাহর কাজ করে তখন তার জন্য একটি গুণাহ লিখা হয়। পক্ষান্তরে যদি সওয়াবের কাজ করে তবে তার জন্য দশটি সওয়াব লিখা হয়। তারপর যদি দুনিয়াতে তার গুণাহের শাস্তি পেয়ে যায় তবে তার জন্য আখেরাতে দশটি সওয়াবই বাকী থাকে, কিন্তু যদি দুনিয়াতে শাস্তি না পায় তবে আখেরাতে একটি গুণাহের বিনিময়ে একটি সওয়াব চলে গেলেও তার আরও নয়টি সওয়াব অবশিষ্ট থাকে। সুতরাং যার একক দশকের উপর প্রাধান্য পায় তার তো ধ্বংসই অনিবার্য। [তাবারী]। এরপর আয়াতে বলা হয়েছে, তাদেরকে আল্লাহ উত্তম জীবন সামগ্রী প্রদান করবেন। এ হচ্ছে ইস্তেগফার ও তাওবার ফল। [কুরতুবী] উন্নত অবস্থা, দুনিয়াতে সার্বিক নিরাপত্তা বোঝানো হয়েছে। আর ‘নির্দিষ্ট সময়’ বলে মৃত্যুকে বোঝানো হয়েছে। অন্য আয়াতেও সেটা বলা হয়েছে, যেমন হুদ আলাইহিস সালাম তার কাওমকে বলেছিলেন, “হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, তারপর তার দিকেই ফিরে আস। তিনি তোমাদের উপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না” [সূরা হুদ: ৫২] অনুরূপ নূহ আলাইহিস সালামের সাথে তার কাওমের কথোপকথন সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “অতঃপর বলেছি, জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, এবং তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা" [সূরা নূহ ১০-১২] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, হে লোকসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো, কারণ আমি দিনে একশত বার তার কাছে তাওবা করি। [মুসলিম: ২৭০২]
[৩] মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ, তার যে সমস্ত কাজ সে সওয়াবের আশায় করেছে। চাই তা সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে হোক অথবা হাত বা পা দ্বারা কোন ভাল আমল করেছে, অথবা কোন ভাল কথা বলেছে, অথবা তার যে সমস্ত ভাল কাজ অতিরিক্ত করেছে সে সবই তাকে প্রদান করা হবে। [তাবারী] কাতাদা বলেন, তা আখেরাতে প্রদান করা হবে [তাবারী]


الصفحة التالية
Icon