নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুমিনদের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করেন [১], তিনি কোন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না [২]।
____________________
[১] আয়াতে মুমিনদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে যে, আল্লাহ্‌ তা'আলা তাদের যাবতীয় ক্ষতি দূরিভূত করবেন। এটা শুধু তাদের ঈমানের কারণে। তিনি কাফেরদের ক্ষতি, শয়তানের কুমন্ত্রণার ক্ষতি, নাফসের কুমন্ত্রণার ক্ষতি, তাদের খারাপ আমলের পরিণতি সংক্রান্ত ক্ষতি, এসব কিছুই প্রতিহত করবেন। কোন অপছন্দ কিছু সংঘটিত হলে তিনি তারা যা বহন করার ক্ষমতা নেই সেটা বহন করে নিবেন, ফলে মুমিনদের জন্য সেটা হাল্কা হয়ে যাবে। প্রত্যেক মুমিনই তার ঈমান অনুসারে এ প্রতিহত ও প্রতিরোধ প্রাপ্ত হবে। কারও বেশী ও কারও কম। [সা’দী] অন্য আয়াতেও আল্লাহ্‌ তা‘আলা তা বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, “আর যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট।” [সূরা আত-তালাকঃ ৩] “আল্লাহ্‌ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন? অথচ তারা আপনাকে আল্লাহ্‌র পরিবর্তে অন্যের ভয় দেখায়।” [সূরা আয-যুমারঃ ৩৬] আরও বলেন, “তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। তোমাদের হাতে আল্লাহ্‌ তাদেরকে শাস্তি দেবেন, তাদেরকে অপদস্থ করবেন, তাদের উপর তোমাদেরকে বিজয়ী করবেন এবং মুমিন সম্প্রদায়ের চিত্ত প্রশান্তি করবেন, আর তিনি তাদের অন্তরের ক্ষোভ দূর করবেন এবং আল্লাহ্‌ যাকে ইচ্ছে তার তাওবা কবুল করবেন। আর আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’’ [সূরা আত-তাওবাহঃ ১৪-১৫] আরও বলেন, “আর আমাদের দায়িত্ব তো মুমিনদের সাহায্য করা।’’ [সূরা আর-রূমঃ ৪৭] আরও বলেন, “আর আমাদের বাহিনীই হবে বিজয়ী।’’ [সূরা আস-সাফফাতঃ ১৭৩] অনুরূপ আরও আয়াত। এর দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য যে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা মুমিনদের থেকে যাবতীয় খারাপ ও বিপদাপদ প্রতিরোধ করবেন। কেননা আল্লাহ্‌র উপর ঈমান বিপদাপদ থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় কারণ। অথবা আয়াতের অর্থ, তিনি মুমিনদের পক্ষ থেকে বেশী বেশী প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করবেন। যখনই আক্রমণকারী আক্রমণ করে তখনই তিনি তাদের পক্ষ থেকে মোকাবিলা করবেন। তারা যত বেশীই ষড়যন্ত্র ও আক্রমনের সমাবেশ করুক না কেন, তিনি তত বেশীই তাদের পক্ষ থেকে তা প্রতিহত করবেন। [আদওয়াউল বায়ান] সুতরাং কুফর ও ঈমানের সংঘাতে মুমিনরা একা ও নিঃসঙ্গ নয় বরং আল্লাহ্‌ নিজেই তাদের সাথে এক পক্ষ হয়ে দাঁড়ান। তিনি তাদেরকে সমর্থন দান করেন। তাদের বিরুদ্ধে শত্রুদের কৌশল ব্যর্থ করে দেন। অনিষ্টকারকদের অনিষ্টকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিতে থাকেন। কাজেই এ আয়াতটি আসলে হক পন্থীদের জন্য একটি বড় রকমের সুসংবাদ। তাদের মনকে সুদৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য এর চেয়ে বড় আর কোন জিনিস হতে পারে না।
[২] যারাই আল্লাহ্‌র অর্পিত আমানতের খেয়ানত করে, আল্লাহ্‌র হক নষ্ট করে, মানুষের হক নষ্ট করে এমন বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞ এবং নিয়ামত অস্বীকারকারীকে আল্লাহ্‌ কখনও ভালবাসেন না। কারণ, আল্লাহ্‌ তার কাছে যেসব আমানত সোপর্দ করেছেন সেগুলোতে সে খেয়ানত করেছে এবং তাকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন অকৃতজ্ঞতা, অস্বীকৃতি ও নেমকহারামির মাধ্যমে তার জবাব দিয়ে চলছে। কাজেই আল্লাহ্‌ তাকে অপছন্দ করেন। আল্লাহ্‌ তার প্রতি দয়া ও ইহসান করেন, আর সে আল্লাহ্‌র প্রতি কুফারী ও অবাধ্যতা করে যাচ্ছে। সুতরাং আল্লাহ্‌ এটা পছন্দ করতে পারেন না। বরং তিনি সেটা ঘৃণা করেন। ক্রোধান্বিত হন। তিনি তাদের কুফারী ও খেয়ানতের শাস্তি তাদেরকে প্ৰদান করবেন। [সা‘দী]


الصفحة التالية
Icon