তাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এ কারনে যে, তারা বলে ‘আমাদের রব আল্লাহ্।’ আল্লাহ্ যদি মানুষদের এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন [১], তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত নাসারা সংসারবিরাগীদের উপাসনাস্থান, গির্জা, ইয়াহূদীদের উপাসনালয় [২] এবং মসজিদসমূহ---যাতে খুব বেশী স্মরণ করা হয় আল্লাহ্র নাম। আর নিশ্চয় আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করেন যে আল্লাহ্কে সাহায্য করে [৩]। নিশ্চয় আল্লাহ্ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
____________________
[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ কোন একটি গাত্র বা জাতিকে স্থায়ী কর্তৃত্ব দান করেননি, এটি তাঁর বিরাট অনুগ্রহ। বরং বিভিন্ন সময় দুনিয়ায় একটি দলকে দিয়ে তিনি অন্য একটি দলকে প্রতিহত করতে থেকেছেন। নয়তো কোন একটি নির্দিষ্ট দল যদি কোথাও স্থায়ী কর্তৃত্ব লাভ করতো তাহলে ইবাদাতগৃহসমূহও বিধ্বস্ত হওয়ার হাত থেকে রেহাই পেতো না। সূরা বাকারায় এ বিষয়বস্তুকে এভাবে বলা হয়েছেঃ “যদি আল্লাহ্ লোকদেরকে একজনের সাহায্যে অন্যজনকে প্রতিহত না করতে থাকতেন তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে যেতো। কিন্তু আল্লাহ্ সৃষ্টিজগতের প্রতি বড়ই করুণাময়।” [আয়াত ২৫১]
[২] আয়াতে বলা হয়েছে, صَوَامِعُ এ শব্দটি صَوْمَعَةٌ এর বহুবচন। এটা নাসারাদের বিশেষ ইবাদাতখানা। আর بِيَعٌ শব্দটি بِيْعَةٌ এর বহুবচন। নাসারাদের সাধারণ গীৰ্জাকে بِيْعَةٌ বলা হয়। ইয়াহুদীদের ইবাদাতখানাকে صَلَوَاتٌ এবং মুসলিমদের ইবাদাতখানাকে مَسَاجِدُ বলা হয়। [ইবন কাসীর] আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ ও জিহাদের আদেশ নাযিল না হলে কোন যুগেই আল্লাহ্র দ্বীনের নিরাপত্তা থাকত না। মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর আমলে صَلَوَاتٌ ঈসা ‘আলাইহিস সালাম-এর আমলে صَوَامِعُ ও بِيَعٌ এবং শেষনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলে মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত। তবে বিগত যামানায় যত শরী‘আতের ভিত্তি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে এবং ওহীর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, এখন তা পরিবর্তিত হয়ে কুফর ও শির্কে পরিণত হয়েছে, সেসব শরী‘আতের ইবাদাতগৃহসমূহের নাম এই আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, স্ব স্ব যামানায় তাদের ইবাদাতাগৃহসমূহের সম্মান ও সংরক্ষণ ফরয ছিল। বর্তমানে সেসব ইবাদতস্থানের সম্মান করার নিয়ম রহিত হয়ে গেছে। লক্ষণীয় যে, আয়াতে সেসব ধর্মের উপাসনালয়ের কথা উল্লেখ করা হয়নি, যেগুলোর ভিত্তি কোন সময়ই নবুওয়ত ও ওহীর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল না; যেমন অগ্নিপূজারী মজুস অথবা মূর্তিপূজারী হিন্দু। কেননা, তাদের উপাসনালয় কোন সময়ই নবুওয়ত ও ওহী নির্ভর ছিল বলে প্রমাণিত হয়নি। [দেখুন, কুরতুবী]
[৩] এ বক্তব্যটি কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উপস্থাপিত হয়েছে। বলা হয়েছে, যারা আল্লাহ্র বান্দাদেরকে তাওহীদের দিকে আহবান করে এবং সত্য দ্বীন কায়েম ও মন্দের জায়গায় ভালোকে বিকশিত করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, আর এজন্যে তারা নবী-রাসূল ও তাদের আনীত দ্বীনকে সাহায্য করে এবং আল্লাহ্র বন্ধুদের সাহায্য করে, তারা আসলে আল্লাহ্র সাথে সহযোগিতা করে। [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর] অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ্ কে সাহায্য কর, তবে তিনি তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা সমূহ সুদৃঢ় করবেন। আর যারা কুফরী করেছে তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের আমলসমূহ ব্যৰ্থ করে দিয়েছেন।” [সূরা মুহাম্মদঃ ৭-৮] [ইবন কাসীর]