তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ্‌ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে যমীনে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়ভীতির পরে তাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ‘ইবাদাত করবে, আমার সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না [১], আর এরপর যারা কুফরী করবে তারাই ফাসিক।
____________________
[১] উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাথীরা যখন মদীনায় তাশরীফ আনলেন এবং আনসারগণ তাদেরকে আশ্রয় দিলেন, তখন সমস্ত আরব এক বাক্যে তাদের শক্রতে পরিণত হলো। সাহাবাগণ তখন রাতদিন অস্ত্ৰ নিয়ে থাকতেন। তখন তারা বললোঃ আমরা কি কখনো এমনভাবে বাঁচতে পারবো যে, আল্লাহ্‌ ছাড়া আর কাউকে ভয় না করে সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুমাতে পারবো? তখন এ আয়াত নাযিল হয়।” [ত্বাবারানী, মুজামুল আওসাত্বঃ ৭/১১৯, হাদীসঃ ৭০২৯, হাকীম- মুস্তাদরাকঃ ২/৪০১, দ্বিয়া আল-মাকদেসীঃ মুখতারাহঃ ১১৪৫]
এ আয়াতে আল্লাহ্‌ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি বিষয়ের ওয়াদা দিয়েছেন। [১] আপনার উম্মাতকে যমীনের বুকে খলীফা ও শাসনকর্তা করা হবে, [২] আল্লাহ্‌র মনোনীত দ্বীন ইসলামকে প্রবল করা হবে এবং [৩] মুসলিমদেরকে এমন শক্তি ও শৌর্যবীর্য দান করা হবে যে, তাদের অন্তরে শক্রর কোন ভয়ভীতি থাকবে না। আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাঁর এই ওয়াদা পূর্ণ করেছেন। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূণ্যময় আমলে মক্কা, খাইবার, বাহরাইন, সমগ্র আরব উপদ্বীপ ও সমগ্ৰ ইয়ামান তারই হাতে বিজিত হয় এবং তিনি হিজরের অগ্নিপূজারী ও শাম দেশের কতিপয় অঞ্চল থেকে জিযিয়া কর আদায় করেন। রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মিসর ও আলেকজান্দ্ৰিয়ার সম্রাট মুকাউকিস, আম্মান ও আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসী প্রমুখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপঢৌকন প্রেরণ করেন ও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। তার ওফাতের পর আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খলীফা হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের পর যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তিনি তা খতম করেন এবং পারস্য, সিরিয়া ও মিসর অভিমুখে সৈন্যাভিযান প্রেরণ করেন। বসরা ও দামেস্ক তারই আমলে বিজিত হয় এবং অন্যান্য দেশেরও কতক অংশ করতলগত হয়। আবু বকর সিদ্দীকের ওফাতের সময় নিকটবর্তী হলে আল্লাহ্‌ তা‘আলা তার অন্তরে উমর ইবনুল খাত্তাবকে পরবর্তী খলীফা নিযুক্ত করার ইলহাম করেন। উমার ইবনুল খাত্তাব খলীফা নিযুক্ত হয়ে শাসনব্যবস্থা এমনভাবে সুবিন্যস্ত করলেন যে, নবীগণের পর পৃথিবী এমন সুন্দর ও সুশৃংখল শাসন ব্যবস্থা আর প্রত্যক্ষ করেনি। তার আমলে সিরিয়া পুরোপুরি বিজিত হয়। এমনিভাবে মিসর ও পারস্যের অধিকাংশ এলাকা তার করতলগত হয়। তার হাতে কায়সার ও কিসরা সমূলে নিশ্চিহ্ন হয়। এরপর উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খেলাফতকালে ইসলামী বিজয়ের পরিধি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পাশ্চাত্য দেশসমূহ, আন্দালুস ও সাইপ্রাস পর্যন্ত, দূরপ্রাচ্য চীন ভূখণ্ড পর্যন্ত এবং ইরাক, খোরাসান ও আহওয়ায ইত্যাদি সব তার আমলেই মুসলিমদের অধিকারভুক্ত হয়। [দেখুন-কুরতুবী] সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “আমাকে সমগ্ৰ ভূখণ্ডের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত একত্রিত করে দেখানো হয়েছে।” [সহীহ মুসলিমঃ ২৮৮৯] আল্লাহ্‌ তা‘আলা এই প্রতিশ্রুতি উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আমলেই পূর্ণ করে দেন। অন্য এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ “খেলাফত আমার পরে ত্রিশ বছর থাকবে।” [আবু দাউদঃ ৪৬৪৬, তিরমিযীঃ ২২২৬, আহমাদঃ ৫/২২১]


الصفحة التالية
Icon