বলুন [১] , ‘তিনি আল্লাহ্, এক-অদ্বিতীয় [২] ,
____________________
সূরা সম্পর্কিত তথ্যঃ
এ সূরার বহু ফযীলত রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নে কয়েকটির উল্লেখ করা হলোঃ
এক. এর ভালবাসা জান্নাতে যাওয়ার কারণ; হাদীসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে আরয করলঃ আমি এই সূরাটি খুব ভালবাসি। তিনি বললেন: এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে দাখিল করবে। [মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৪১, ১৫০]
দুই. এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ। হাদীসে এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমরা সবাই একত্রিত হয়ে যাও। আমি তোমাদেরকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ শুনাব। অতঃপর যাদের পক্ষে সম্ভব ছিল, তারা একত্রিত হয়ে গেলে তিনি আগমন করলেন এবং সূরা এখলাস পাঠ করে শুনালেন। তিনি আরও বললেন, এই সূরাটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। [মুসলিম: ৮১২, তিরমিয়ী: ২৯০০] এ অর্থে হাদীসের সংখ্যা অসংখ্য।
তিন. বিপদাপদে উপকারী। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মুসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। [আবু দাউদ: ৫০৮২, তিরমিয়ী: ৩৫৭৫, নাসায়ী: ৭৮৫২]
চার. ঘুমানোর আগে পড়ার উপর গুরুত্ব। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে উকবা ইবনে আমের আমি কি তোমাকে এমন তিনটি উত্তম সূরা শিক্ষা দিব না যার মত কিছু তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কুরআনেও নাযিল হয়নি। উকবা বললেন, আমি বললাম, অবশ্যই হ্যাঁ, আল্লাহ্ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। উকবা বলেন, তারপর রাসূল আমাকে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আ‘উযু বিরাব্বিল ফালাক, কুল আ‘উযু বিরাব্বিন নাস’ এ সূরাগুলো পড়ালেন, তারপর বললেন, হে উকবা! রাত্ৰিতে তুমি ততক্ষণ নিদ্রা যেয়ো না, যতক্ষণ সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস না পাঠ কর। উকবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: সেদিন থেকে আমি কখনও এই আমল ছাড়িনি। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১৪৮, ১৫৮-১৫৯]
পাঁচ. এ সূরা পড়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়মিত আমল ছিল। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিছানায় ঘুমানোর জন্য যেতেন তখন তিনি তার দু হাতের তালু একত্রিত করতেন তারপর সেখানে কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বিরাব্বিন নাস’ এ তিন সূরা পড়ে ফুঁ দিতেন, তারপর এ দু’ হাতের তালু দিয়ে তার শরীরের যতটুকু সম্ভব মসেহ করতেন। তার মাথা ও মুখ থেকে শুরু করে শরীরের সামনের অংশে তা করতেন। এমনটি রাসূল তিনবার করতেন। [বুখারী: ৫০১৭, আবু দাউদ: ৫০৫৬, তিরমিয়ী: ৩৪০২]
------------------
[১] বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ্ তা‘আলার বংশপরিচয় জিজ্ঞেস করেছিল, যার জওয়াবে এই সূরা নাযিল হয়। [তিরমিয়ী: ৩৩৬৪, মুসনাদে আহমাদ: ৫/১৩৪, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৫৪০] কোন কোন বর্ণনায় এসেছে, মুশরিকরা আরও প্রশ্ন করেছিল- আল্লাহ্ তা‘আলা কিসের তৈরী, স্বর্ণরৌপ্য অথবা অন্য কিছুর? এর জওয়াবে সূরাটি অবতীর্ণ হয়েছে। [আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ী: ৬/৩৭০, তাবরানী: মু‘জামুল আওসাত: ৩/৯৬, মুসনাদে আবি ইয়া‘লা: ৬/১৮৩, নং-৩৪৬৮. আদ-দিনাওয়ারী: আল-মুজালাসা ও জাওয়াহিরুল ইলম, ৩/৫২৮, নং ১১৪৫] এখানে ‘বলুন’ শব্দটির মাধ্যমে প্রথমত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ তাকেই প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনার রব কে? তিনি কেমন? আবার তাকেই হুকুম দেয়া হয়েছিল, প্রশ্নের জবাবে আপনি একথা বলুন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিরোধানের পর এ সম্বোধনটি প্রত্যেক মুমিনের সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে কথা বলার হুকুম দেয়া হয়েছিল এখন সে কথা প্রত্যেক মুমিনকেই বলতে হবে।
[২] এ বাক্যটির অর্থ হচ্ছে, তিনি (যাঁর সম্পর্কে তোমরা প্রশ্ন করছো) আল্লাহ্, একক-অদ্বিতীয়। তাঁর কোন সমকক্ষ, সদৃশ, স্ত্রী, সন্তান, অংশীদার কিছুই নেই। একত্ব তাঁরই মাঝে নিহিত। তাই তিনি পূর্ণতার অধিকারী, অদ্বিতীয়-এক। সুন্দর নামসমূহ, পূর্ণ শ্রেষ্ঠ গুণাবলী এককভাবে শুধুমাত্র তাঁরই। [কুরতুবী, সা’দী] আর أحد শব্দটি একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কেননা তিনিই গুণাবলী ও কার্যাবলীতে একমাত্র পরিপূর্ণ সত্তা। [ইবন কাসীর] মোটকথা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাঁর সত্তা ও গুণাবলীতে একক, তার কোন সমকক্ষ, শরীক নেই। এ সূরার শেষ আয়াত “আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই” দ্বারা তিনি এর ব্যাখ্যা করেছেন। মূলত সমগ্র কুরআন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালাত এমনকি সকল নবী-রাসূলদের রিসালাতের আগমন হয়েছিলো এ একত্ব ঘোষণা ও প্রতিষ্ঠার জন্যই। আল্লাহ্ ব্যতীত কোন হক মাবুদ বা ইলাহ নেই- সমগ্র সৃষ্টিজগতেই রয়েছে এর পরিচয়, আল্লাহ্র একত্বের পরিচয়। কুরআনে অগণিত আয়াতে এ কথাটির প্রমাণ ও যুক্তি রয়েছে। [আদ্ওয়াউল বায়ান]


الصفحة التالية
Icon