ﯦ
surah.translation
.
ﰡ
১. আসমান ও যমীনে থাকা আল্লাহর সৃষ্টিকুল তাঁর পবিত্রতা ও মাহত্ম্য বর্ণনা করেছে। তিনি সেই প্ররাক্রমশালী যাঁকে কেউ পরাস্ত করতে পারে না। তিনি তাঁর সৃষ্টি ও পরিচালনায় প্রজ্ঞাবান।
২. আসমান ও যমীনের রাজত্ব এককভাবে কেবল তাঁরই। তিনি যাকে জীবিত রাখতে চান রাখেন। আর যাকে মারতে চান মারেন। তিনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান; তাঁকে কোন কিছুই অপারগ করতে পারে না।
৩. তিনিই প্রথম; যাঁর পূর্বে কোন কিছু ছিলো না। তিনিই শেষ; যাঁর পর আর কিছুই থাকবে না। তিনিই প্রকাশ্য; যাঁর ঊর্ধ্বে কিছুই নেই। তিনিই অপ্রকাশ্য; যাঁর অপেক্ষা গভীরে অন্য কিছু নেই। তিনিই সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত; তাঁর বাইরে কোন কিছুই নেই।
৪. তিনি আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। যা রবিবার দিনে শুরু হয়েছে এবং শুক্রবারে শেষ হয়েছে। অথচ তিনি চোখের পলক অপেক্ষা কম সময়ে তা সৃষ্টি করতে সক্ষম। অতঃপর তিনি তাঁর সাথে মানানসই প্রক্রিয়ায় আরশের উপর গমন করেন ও সমুন্নত হোন। তিনি যমীনে যে সব বারি ও বীজ প্রবেশ করে তা জানেন এবং তা থেকে যে সব শস্য ও খনিজ দ্রব্য উদ্গত হয় তাও জানেন। আবার তিনি আসমান থেকে যে বৃষ্টি, ওহী ইত্যাদি নাযিল হয় এবং আসমানে যে সব ফিরিশতা, বান্দাদের আমল ও আত্মাগুলো উত্থিত হয় তাও জানেন। হে লোক সকল! তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তাঁর জ্ঞানের মাধ্যমে তোমাদের সাথেই রয়েছেন। তাঁর নিকট তোমাদের কোন কিছুই গোপন নেই। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের সকল কাজের সর্বদ্রষ্টা। তাঁর নিকট তোমাদের কোন আমলই গোপন নেই এবং অচিরেই তিনি তোমাদেরকে সেগুলোর বদলা দিবেন।
৫. আসমান ও যমীনসমূহের রাজত্ব এককভাবে তাঁরই। এককভাবে তাঁর দিকেই সকল বিষয় প্রত্যাবর্তিত হবে। ফলে তিনি কিয়ামত দিবসে সৃষ্টিকুলের হিসাব গ্রহণ করবেন এবং তাদের আমলের প্রতিদান দিবেন।
৬. তিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন। ফলে অন্ধকার ছেয়ে যায় এবং মানুষ নিদ্রা যাপন করে। তেমনিভাবে তিনি দিনকে রাতের মধ্যে প্রবিষ্ট করেন ফলে আলো বিস্তার লাভ করে এবং লোকজন তাদের কাজে সক্রিয় হয়। তিনি স্বীয় বান্দাদের বক্ষদেশের বিষয়ে পরিজ্ঞাত। তাঁর নিকট এর কিছুই গোপন থাকে না।
৭. তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আনো এবং রাসূলের উপর। আর যে সব সম্পদে আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিনিধি বানিয়েছেন সেগুলোকে তাঁর বিধান অনুযায়ী ব্যয় করো। বস্তুতঃ তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করেছে এবং তাদের সম্পদকে আল্লাহর পথে ব্যয় করেছে তাদের জন্য তাঁর নিকট রয়েছে মহা প্রতিদান তথা জান্নাত।
৮. কোন্ বস্তু তোমাদেরকে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নে বাধা দেয়?! অথচ রাসূল তোমাদেরকে আল্লাহর প্রতি আহŸান করছেন। যেন তোমরা নিজেদের মহান রবের প্রতি ঈমান আনয়ন করো। বস্তুতঃ তিনি তোমাদের নিকট থেকে তোমাদেরকে আপন পিতার পৃষ্ঠ থেকে বের করার সময় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছেন যে, তোমরা তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করবে যদি তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হয়ে থাকো।
৯. তিনিই সেই আল্লাহ যিনি তাঁর বান্দাহ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছেন। যাতে তিনি তোমাদেরকে কুফরী ও অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে ঈমান ও জ্ঞানের আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের উপর দয়াবান ও করুণাশীল। কেননা, তিনি তোমাদের নিকট পথ প্রদর্শক ও সুসংবাদ দাতা হিসাবে তাঁর নবীকে প্রেরণ করেছেন।
১০. কোন্ বস্তু তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করা থেকে বিরত রাখে?! অথচ আসমান ও যমীনের সর্বস্বত্ব আল্লাহর। হে মুমিন সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে মক্কা বিজয়ের পূর্বে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে স্বীয় সম্পদ ব্যয় করেছে এবং ইসলামের সাহায্যের উদ্দেশ্যে আল্লাহর পথে ব্যয় করেছে আর যে পরে ব্যয় করেছে এবং কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করেছে তাদের উভয় সমান হতে পারে না। বিজয়ের পূর্বে যারা আল্লাহর পথে ব্যয় ও যুদ্ধ করেছে তারা আল্লাহর নিকট ওদের তুলনায় অধিক মর্যাদাবান যারা বিজয়ের পর আল্লাহর পথে ব্যয় ও কাফিরদের সাথে যুদ্ধ করেছে। তবে আল্লাহ উভয় পক্ষের সাথে জান্নাতের অঙ্গীকার করেছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের সকল কাজ সম্পর্কে অবগত। তাঁর নিকট তোমাদের কোন কাজই গোপন নয়। অচিরেই তিনি তোমাদেরকে এর বদলা দিবেন।
১১. কে এমন আছে যে নিজ সম্পদকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে খুশী মনে ব্যয় করবে, ফলে আল্লাহ তার ব্যয়িত সম্পদের বহু গুণ বেশী প্রতিদান দিবেন। আর তার জন্য থাকবে কিয়ামত দিবসে সম্মানজনক প্রতিদান তথা জান্নাত?!
১২. সে দিন আপনি দেখতে পাবেন মু’মিন পুরুষ ও মহিলাদের সম্মুখ পানে ও ডান দিকে তাদের জ্যোতি চলছে এবং তাদেরকে সে দিন বলা হবে, তোমাদের জন্য আজ এমন উদ্যানসমূহের সুসংবাদ যেগুলোর অট্টালিকা ও বৃক্ষরাজির তলদেশ দিয়ে নদী-নালা প্রবাহিত। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে। এ প্রতিদানই হলো মহা বিজয়। যার সাথে কোন বিজয়ের তুলনা হয় না।
১৩. সে দিন মুনাফিক নারী ও পুরুষরা ঈমানদারদেরকে বলবে: তোমরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করো। যাতে করে আমরা তোমাদের আলো থেকে কিছু গ্রহণ করতে পারি। যা আমাদেরকে পুলসিরাত পার হতে সহযোগিতা করবে। তখন মুনাফিকদেরকে ঠাট্টার ছলে বলা হবে, তোমরা নিজেদের পেছনের দিকে ফিরে গিয়ে পথ দেখার জন্য আলো অন্বেষণ করো। তখন তাদের সামনে প্রাচীর দেয়া হবে। উক্ত প্রাচীরে রয়েছে এমন দরজা যার ভিতরের দিক যেটি মুমিনদের নিকটবর্তী তাতে রয়েছে রহমত। আর বাইরের দিক যেটি মুনাফিকদের নিকটবর্তী তাতে রয়েছে শাস্তি।
১৪. তখন মুনাফিকরা মুমিনদেরকে ডাক দিয়ে বলবে, আমরা কি ইসলাম পালনে ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে তোমাদের সাথে ছিলাম না?! মুসলমানরা তাদেরকে বলবে, হ্যাঁ, তোমরা আমাদের সাথেই ছিলে। তবে তোমরা মুনাফিকীর মাধ্যমে নিজেদের নফসকে আক্রান্ত করে সেটিকে ধ্বংস করে দিয়েছো। আর তোমরা মুমিনদের ব্যাপারে অপেক্ষমাণ থাকতে যেন তারা পরাজিত হয়। ফলে তোমরা কুফরীর ঘোষণা দিবে এবং তোমরা আল্লাহ কর্তৃক মুমিনদেরকে সাহায্য করার ব্যাপারে ও পুনরুত্থানে সন্দেহ পোষণ করেছো। আর তোমাদেরকে মিথ্যা লোভ-লালসা ধোঁকা দিয়েছে। অবশেষে এ অবস্থাতেই তোমাদের নিকট মৃত্যু এসে পৌঁছেছে এবং শয়তান তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে ধোঁকা দিয়েছে।
১৫. তাই হে মুনাফিকরা! আজকের দিন তোমাদের থেকে আল্লাহর শাস্তি হতে রেহাই পাওয়ার জন্য কোনরূপ মুক্তিপণ গ্রহণ করা হবে না। আর না ওদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে যারা সঘোষিতভাবে আল্লাহকে অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ তোমাদের ও কাফিরদের শেষ ঠিকানা হলো জাহান্নাম। সেটি তোমাদের অধিক যোগ্য। আর তোমরাও সেটির অধিক যোগ্য। যা কতোই না নিকৃষ্ট ঠিকানা।
১৬. যারা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলে ঈমান এনেছে তাদের কি এখনও সময় আসেনি যে, মহান আল্লাহর স্মরণে ও কুরআনে অবতীর্ণ সুসংবাদ কিংবা দুঃসংবাদ দ্বারা তাদের অন্তর প্রশান্ত ও বিগলিত হবে?! আর তারা যেন তাদের পূর্বে যে সব ইহুদীদেরকে তাওরাত প্রদান করা হয়েছিলো এবং যে সব খ্রিস্টানদেরকে ইঞ্জীল প্রদান করা হয়েছিলো তাদের মত শক্ত অন্তরের না হয়ে যায়। বস্তুতঃ তাদের ও নবীদের আগমনের মেয়াদ দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের অন্তর রূঢ় হয়ে যায়। আর তাদের অনেকেই ছিলো আল্লাহর আনুগত্য থেকে তাঁর অবাধ্যতার দিকে বেরিয়ে আসা লোক।
১৭. জেনে রেখো, আল্লাহ যমীনকে খরার পর শস্যাদি উদ্গত করার মাধ্যমে জীবিত করেন। হে লোক সকল! আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর ক্ষমতা ও একত্ববাদের প্রমাণবাহী দলীল প্রমাণাদি স্পষ্টভাবে বাতলে দিয়েছি। যাতে তোমরা সেগুলো আয়ত্ব করতে পারো। ফলে তোমরা জানবে যে, যিনি শুষ্ক যমীনকে সজীব করলেন তিনি তোমাদেরকে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে সক্ষম। তেমনিভাবে তিনি তোমাদের শক্ত অন্তরগুলোকেও বিগলিত করতে সক্ষম।
১৮. যে সব পুরুষ ও মহিলা কোনরূপ খোঁটা ও কষ্ট না দিয়ে খুশী মনে নিজেদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে তাদের আমলের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করা হবে। তথা একটি পুণ্য দশ থেকে সাত শত এমনকি আরো অধিক হারে দেয়া হবে। তাদের জন্য এর সাথে আরো থাকবে সম্মানী প্রতিদান তথা জান্নাত।
১৯. যারা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলদের উপর কোনরূপ পার্থক্য ব্যতিরেকে ঈমান এনেছে তারাই সিদ্দীক ও স্বীয় রবের নিকট সাক্ষ্য প্রদানকারী। তাদের জন্য রয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত সম্মানী প্রতিদান। আর তাদের জন্য রয়েছে তাদের সেই জ্যোতি যা কিয়ামত দিবসে তাদের সম্মুখ পানে ও ডানে চলবে। আর যারা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলকে এবং আমার রাসূলের উপর অবতীর্ণ আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে তারা হবে জাহান্নামী। তারা সেখানে কিয়ামত দিবসে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানের জন্য প্রবেশ করবে। আদৗ সেখান থেকে তারা বের হবে না।
২০. জেনে রেখো, দুনিয়ার জীবন কেবল খেল-তামাশা ও অবহেলার। যাকে নিয়ে শরীর খেলা করে ও অন্তর উদাসীনতা প্রদর্শন করে। আর সৌন্দর্যের যাকে দিয়ে তোমরা সাজগোজ করো। আর রাজত্ব ও সম্পদ নিয়ে তোমাদের পারস্পরিক অহঙ্কারের। আর ধন-সম্পদ ও সন্তানদের প্রাচুর্য নিয়ে গৌরবের। যেমন বৃষ্টি দ্বারা উদ্গত শস্য দেখে কৃষক আনন্দিত হয় অতঃপর কিছু দিন পরেই এই সবুজ শস্য শুকিয়ে যায়। ফলে হে দর্শক! তুমি সেটিকে সবুজের পর হলুদ বর্ণ দেখতে পাও। অতঃপর আল্লাহ সেটিকে খড়কুটো বনান যা চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে যায়। পরকালে কাফির ও মুনাফিকদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। বস্তুতঃ দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্ষণস্থায়ী সম্পদ; যা টিকে থাকার নয়। ফলে যে ব্যক্তি তার ক্ষয়প্রাপ্ত সম্পদকে পরকালের চিরস্থায়ী ভোগ-সমাগ্রীর উপর প্রাধান্য দিলো সে ক্ষয়প্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত।
২১. তোমরা সে সব নেক আমলের প্রতি অগ্রসর হও যদ্বারা তোমরা নিজেদের পাপের ক্ষমা লাভ করতে সক্ষম হবে। তথা তাওবাসহ অন্যান্য নৈকট্যের বিষয়াদি। যাতে করে এগুলোর মাধ্যমে সেই জান্নাত লাভ করতে সক্ষম হও যার প্রস্থ হলো আসমান ও যমীন বরাবর। এই জান্নাত আল্লাহ ওদের উদ্দেশ্যে তৈরী করেছেন যারা তাঁর উপর ও তাঁর রাসূলগণের উপর ঈমান আনয়ন করেছে। বস্তুতঃ উক্ত প্রতিদান আল্লাহর অনুগ্রহ মাত্র। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। মহান আল্লাহ স্বীয় মু’মিন বান্দাদের প্রতি মহা অনুগ্রহশীল।
২২. যমীনে খরাসহ অন্য যতো বিপর্যয় ঘটে কিংবা নিজেদের মধ্যে যে সব আপদ সংঘটিত হয় তা সৃষ্টির পূর্বে লাওহে মাহফুজে সংরক্ষিত ছিল। বস্তুতঃ এটি আল্লাহর জন্য সহজ।
২৩. এটি এ জন্য যে, যাতে করে হে মানব সমাজ! তোমরা হারানো বিষয়ের উপর দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হও। আর তিনি যে নিয়ামত দিয়েছেন তাতে অহঙ্কারমূলক আনন্দে ফেটে না পড়ো। বস্তুতঃ আল্লাহ মানুষকে যা দান করেছেন তাতে কোন অহঙ্কারী দাম্ভিককে তিনি পছন্দ করেন না।
২৪. যারা তাদের উপর যা ব্যয় করা ফরয তাতে কর্পণ্য করে এবং অন্যদেরকে কার্পণ্যের নির্দেশ দেয় তারা ক্ষতিগ্রস্ত। যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আদৗ আল্লাহর কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। বরং সে কেবল তার নিজেরই ক্ষতি করবে। আল্লাহই ধনাঢ্য। ফলে তিনি নিজ বান্দাদের আনুত্যের প্রতি মুখাপেক্ষী নন। তিনি সর্বাবস্থায় প্রশংসিত।
২৫. অবশ্যই আমি নিজ রাসূলগণের প্রতি সুস্পষ্ট দলীল ও মহান প্রমাণাদি অবতীর্ণ করেছি এবং আমি তাঁদের সাথে কিতাবও অবতীর্ণ করেছি। তেমনিভাবে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য পরিমাপক অবতীর্ণ করেছি। যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সেই সাথে আমি শক্ত ও সুদৃঢ় লোহা অবতীর্ণ করেছি। তা থেকে অস্ত্র তৈরী করা হয় এবং তাতে রয়েছে মানুষের জন্য তাদের শিল্প ও পেশার উপকারিতাসমূহ। আর যাতে আল্লাহ বান্দাদের অবগতির জন্য নিশ্চিত হন যে, তাঁকে ও তাঁর রাসূলদেরকে কে সাহায্য করে। অবশ্যই আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী। তাঁকে কোন কিছুই পরাস্ত করতে পারে না। আর না কোন কিছু তাঁকে অপারগ করতে পারে।
২৬. আমি নূহ ও ইবরাহীম (আলাইহিমাস-সালাম)কে রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছি এবং তাঁদের সন্তানদেরকে নবুওয়াত ও অবতীর্ণ কিতাবাদি উপহার দিয়েছি। ফলে তাঁদের সন্তানদের মধ্যকার কেউ সরল পথ পেয়ে তাওফীকপ্রাপ্ত হয়েছে। আবার তাদের মধ্যকার অনেকেই আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে রয়েছে।
২৭. অতঃপর আমি আমার রাসূলগণকে প্রেরণ করি। আমি তাঁদেরকে নিজেদের জাতির নিকট একের পর এক প্রেরণ করতে থাকি। এরপর ঈসা ইবনু মারইয়ামকে প্রেরণ করি ও তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করি। যারা তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করেছে ও তাঁর অনুগত হয়েছে তাদের অন্তরে আমি দয়া-মায়া ঢেলে দিয়েছি। ফলে তারা পরস্পর ভালোবাসা ও দয়া-মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ ছিলো। তবে তারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি উদ্ভাবন করে। ফলে তারা নিজেদের জন্য হালাল কিছু কাজ পরিত্যাগ করলো যথা বিবাহ ও যাবতীয় উপভোগ। যা আমি তাদের নিকট কামনা করি নি। বরং তারা দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবন স্বরূপ নিজেদেরকে এতে বাধ্য করলো। বস্তুতঃ আমি তাদের নিকট কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি কমনার দাবি রেখেছিলাম। কিন্তু তারা তা করলো না। তাই তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে তাদের প্রতিদান দিয়েছি। কিন্তু তাদের মধ্যকার অনেকেই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা নিয়ে আগমন করেছেন সে ব্যাপারে আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে।
২৮. হে আল্লাহর উপর ঈমান আনয়নকারী ও তাঁর প্রবর্তিত বিষয়ে আমলকারীরা! তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাঁকে ভয় করো এবং তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করো। তাহলে তিনি তোমাদেরকে তোমাদের কর্তৃক মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও পূর্ববর্তী রাসূলগণের উপর ঈমান আনয়নের দ্বিগুণ প্রতিদান দিবেন। তিনি তোমাদের উদ্দেশ্যে এমন জ্যোতি প্রদান করবেন যদ্বারা তোমরা দুনিয়ার জীবনে সঠিক পথ দেখো এবং কিয়ামত দিবসে তদ্বারা পুলসিরাতের আলো গ্রহণ করতে পারো। উপরন্তু তিনি তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। ফলে তা গোপন করবেন। এমনকি তোমাদেরকে সেগুলোর দরুন পাকড়াও করবেন না। বস্তুতঃ আল্লাহ বান্দাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়াপরবশ।
২৯. হে মুমিনরা! আমি বিশদভাবে তোমাদের উদ্দেশ্যে আমার প্রস্তুতকৃত মহা অনুগ্রহ তথা বহু গুণে প্রবৃদ্ধ প্রতিদানের কথা বলে দিয়েছি। যাতে করে পূর্বেকার ইহুদি ও খ্রিস্টান রূপী আহলে কিতাব জানতে পারে যে, তারা আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে এমন কোন ক্ষমতা রাখে না যে, তারা যাকে ইচ্ছা কিছু দিয়ে দিবে আর যাকে ইচ্ছা কোন কিছু থেকে বিরত রাখবে। তারা যেন জানতে পারে যে, অনুগ্রহ বলতে সবই মহান আল্লাহর হাতে। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যকার যাকে ইচ্ছা তা দান করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ মহা অনুগ্রহের অধিকারী। যদ্বারা তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যকার যাকে ইচ্ছা অধিকারী করেন।