ﮤ
surah.translation
.
ﰡ
১. এ সূরাটি আমি নাযিল করেছি এবং এর বিধি-বিধানের উপর আমল করা আমি ওয়াজিব করে দিয়েছি। উপরন্তু তাতে অনেকগুলো সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নাযিল করেছি। যেন তোমরা তাতে থাকা বিধানগুলোকে স্মরণ করে সেগুলোর উপর আমল করতে পারো।
২. অবিবাহিতা ব্যভিচারিণী ও অবিবাহিত ব্যভিচারীর প্রত্যেককে একশ’টি বেত্রাঘাত করো। তাদের ব্যাপারে কোন দয়া ও মায়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না বসে। যার ফলে তোমরা তাদের উপর দÐবিধি প্রয়োগ করবে না অথবা তা হালকা করে দিবে। যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী হয়ে থাকো। আর যেন তাদের উপর দÐবিধি কায়েমের সময় সেখানে একদল মু’মিন উপস্থিত থাকে। যেন তাদের ব্যাপারটি বেশি প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং তাদেরকে ও অন্যান্যদেরকে তা থেকে বিরত রাখা যায়।
৩. ব্যভিচারের ভয়াবহতার দরুন আল্লাহ তা‘আলা এ কথা উল্লেখ করলেন যে, একজন অভ্যস্ত ব্যভিচারী তার ন্যায় কোন ব্যভিচারিণী অথবা শিরককারিণী মেয়েকেই সে বিয়ে করতে চায়। যে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে চায় না। যদিও তাকে বিবাহ করা জায়িয নয়। তেমনিভাবে একজন অভ্যস্তা ব্যভিচারিণী তার ন্যায় কোন ব্যভিচারী অথবা শিরককারী পুরুষকেই সে বিয়ে করতে চায়। যে ব্যভিচার থেকে রক্ষা পেতে চায় না। যদিও তাকে বিবাহ করা জায়িয নয়। বস্তুতঃ একজন ব্যভিচারিণীকে বিবাহ করা এবং ব্যভিচরীর নিকট বিবাহ দেয়া মু’মিনদের উপর হারাম।
৪. যারা সতী মহিলাদেরকে এবং (তাদের ন্যায় সাধু পুরুষদেরকে) অশ্লীলতার অপবাদ দিয়েছে অতঃপর তাদের অশ্লীলতার অপবাদের ব্যাপারে চার জন সাক্ষী আনতে পারেনি তাহলে হে বিচারকরা! তোমরা তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করো এবং আর কখনো তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করবে না। বস্তুতঃ যারা সতী মহিলাদেরকে অপবাদ দেয় তারা আল্লাহর আনুগত্যের বাইরে।
৫. তবে যারা এ ঘটনার পর আল্লাহর নিকট তাওবা করে ফেলেছে এবং নিজেদের আমলগুলো সংশোধন করে নিয়েছে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা ও সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৬. যে পুরুষরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়; অথচ তারা নিজেরা ছাড়া এমন কোন সাক্ষী নেই যারা তাদের অপবাদের সত্যতার ব্যাপারে তাদের জন্য সাক্ষ্য দিবে তাহলে তাদের প্রত্যেকেই আল্লাহর নামে এভাবে চারবার সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয়ই সে তার স্ত্রীকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সত্যবাদী।
৭. অতঃপর সে তার পঞ্চম সাক্ষ্যতে নিজের উপর অভিশাপের উপযুক্ততার বদদু‘আ বাড়িয়ে দিবে যদি সে তার অপবাদে মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে।
৮. এরই মাধ্যমে সে মহিলা ব্যভিচারের দÐবিধি পাওয়ার উপযুক্ত হবে। তবে তার উপর থেকে এ দÐবিধি প্রতিহত করা হবে যখন সে আল্লাহর নামে এভাবে চারবার সাক্ষ্য দিবে যে, নিশ্চয়ই সে পুরুষ তাকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার ব্যাপারে অবশ্যই মিথ্যাবাদী।
৯. অতঃপর সে তার পঞ্চম সাক্ষ্যতে নিজের উপর আল্লাহর গযবের বদদু‘আ বাড়িয়ে দিবে যদি সে পুরুষ তার দেয়া অপবাদে সত্যবাদী হয়ে থাকে।
১০. হে মানুষ! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো আর যদি তিনি তাঁর তাওবাকারী বান্দার তাওবা গ্রহণকারী এবং তাঁর শরীয়ত ও পরিকল্পনায় প্রজ্ঞাময় না হতেন তাহলে তিনি তোমাদের গুনাহগুলোর দ্রæত শাস্তি দিতেন এবং তোমাদেরকে সেগুলোর জন্য লজ্জিত করতেন।
১১. নিশ্চয়ই যারা উম্মুল-মু’মিনীন আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কে অশ্লীল কাজের অপবাদ দিয়েছে তারা কিন্তু তোমাদের সাথে সম্পৃক্ত একটি দল। হে মু’মিনরা! তোমরা মনে করো না যে, তাদের এ অপবাদমূলক অপকর্ম তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বরং তা অনেক ক্ষেত্রে উত্তম। কারণ, তাতে রয়েছে সাওয়াব এবং মু’মিনদের জন্য বাছাইপর্ব উপরন্তু এর পাশাপাশি তা হলো উম্মুল-মু’মিনীনের পবিত্রতার ঘোষণা। যারা তাকে অশ্লীতার অপবাদ দেয়ার অংশীদার তাদের প্রত্যেকের জন্য রয়েছে তার গুনাহ কামাইয়ের প্রতিদান। কারণ, সে অপবাদের কথা উচ্চারণ করেছে। আর যে তা শুরু করে এর বড় অংশটুকুই বহন করেছে তার জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। এর দ্বারা উদ্দেশ্য আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল।
১২. যখন মু’মিন পুরুষ ও মহিলারা তাদেরই অন্য মু’মিন ভাইদের পক্ষ থেকে এ মহা অপবাদ শুনলো তখন তারা কেন যাকে এ অপবাদ দেয়া হয়েছে তার পবিত্রতায় বিশ্বাস করলো না। আর বললো না যে, এটি একটি সুস্পষ্ট মিথ্যা।
১৩. উম্মুল-মু’মিনীন আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এর ব্যাপারে অপবাদদাতারা তাদের মহা অপবাদের উপর কেন চারজন সাক্ষী আনলো না। যারা তাদের অপবাদের বিশুদ্ধতার উপর সাক্ষ্য দিতো। যখন তারা এ ব্যাপারে চারজন সাক্ষী আনতে পারেনি এবং কখনোই তারা তা আনতে পারবে না তখন তারা আল্লাহর বিচারে মিথ্যুক বলেই প্রমাণিত।
১৪. হে মু’মিনরা! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো -যার ফলে তিনি তোমাদেরকে দ্রæত শাস্তি দেননি- আর যদি তিনি তোমাদের মধ্যকার তাওবাকারীদের তাওবা গ্রহণ না করতেন তাহলে তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি পেয়ে বসতো। কারণ, তোমরা উম্মুল-মু’মিনীনকে মিথ্যা অপবাদ দেয়ার কাজে লিপ্ত হয়েছিলে।
১৫. যখন তোমাদের একে অন্য থেকে তা বর্ণনা করেছে এবং তা বাতিল হওয়া সত্তে¡ও তোমরা তা নিজেদের মুখ দিয়ে চালাচালি করছিলে; অথচ সে ব্যাপারে তোমাদের কোন জ্ঞানই নেই। তোমরা মনে করছিলে এ ব্যাপারটি একেবারেই সহজ ও গুরুত্বহীন। অথচ তা আল্লাহর নিকট খুবই মারাত্মক। কারণ, তাতে রয়েছে মিথ্যা ও নিরপরাধ লোককে অপবাদ দেয়া।
১৬. যখন তোমরা এ অপবাদ শুনলে তখন কেন তোমরা এ কথা বললে না যে, এ বিশ্রী ব্যাপার নিয়ে কথা বলা আমাদের জন্য সঠিক হবে না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি পবিত্র। তারা উম্মুল-মু’মিনীনকে যে অপবাদ দিয়েছে তা কিন্তু ভারী মিথ্যা কথা।
১৭. আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং এ কথার উপদেশও দিচ্ছেন যে, যেন তোমরা এমন অপবাদের দিকে আবার ফিরে না যাও। ফলে তোমরা একজন নিরপরাধকে আবারো অশ্লীলতার অপবাদ দিবে। যদি তোমরা আল্লাহতে বিশ্বাসী হয়ে থাকো।
১৮. আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য তাঁর বিধানাবলী ও উপদেশ সংক্রান্ত আয়াতসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করছেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সব কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। এগুলোর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। তিনি অচিরেই তোমাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিবেন। তিনি তাঁর শরীয়ত রচনায় ও পরিকল্পনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
১৯. নিশ্চয়ই যারা মু’মিনদের মাঝে অপকর্মসমূহ বিশেষ করে ব্যভিচারের অপবাদ ছড়িয়ে যাওয়া পছন্দ করে তাদের জন্য দুনিয়াতে রয়েছে অপবাদের দÐ কায়েমের মাধ্যমে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে পরকালের জাহান্নামের শাস্তি। আল্লাহ তাদের মিথ্যা সম্পর্কে জানেন এবং তাঁর বান্দাদের বিষয়টি কোন্ পর্যন্ত গড়াবে তাও জানেন। তিনি তাদের সুবিধাদির কথাও জানেন। অথচ তোমরা তা জানো না।
২০. হে অপবাদে লিপ্তরা! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকতো আর যদি আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু ও করুণাময় না হতেন তাহলে তিনি তোমাদেরকে দ্রæত শাস্তি দিতেন।
২১. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী মু’মিনরা! তোমরা বাতিলকে সজ্জিত করার ক্ষেত্রে শয়তানের পথগুলোর অনুসরণ করো না। যে তার পথগুলোর অনুসরণ করবে তার জানা থাকা দরকার যে, নিশ্চয়ই সে শরীয়ত বিরোধী বিশ্রী কথা ও কাজের আদেশ করবে। হে মু’মিনরা! যদি তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ না থাকতো তাহলে তিনি তোমাদের মধ্যকার কোন তাওবাকারীর তাওবা কবুলের মাধ্যমে তাকে পরিচ্ছন্ন করতেন না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা যার ব্যাপারে চান তার তাওবা কবুলের মাধ্যমে তাকে পবিত্র করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের সকল কথা শুনেন এবং তোমাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে ভালোই জানেন। এগুলোর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তোমাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিবেন।
২২. সম্পদে সচ্ছল ও ধর্মীয় সম্মানের অধিকারী ব্যক্তিরা তাদের মুহাজির পরমুখাপেক্ষী গরিব আত্মীয়দেরকে কোন অপরাধে লিপ্ত হওয়ার দরুন কিছু না দেয়ার কসম করবে না। বরং তাদেরকে যেনো তারা ক্ষমা ও মার্জনা করে। তোমরা কি এ কথা পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের গুনাহগুলো মাফ করে দিবেন যদি তোমরা তাদেরকে ক্ষমা ও মার্জনা করো?! বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু। অতএব, তাঁর বান্দারা তাঁরই অনুসরণ করুক। এ আয়াতটি মুলতঃ আবু বকর সিদ্দীক সম্পর্কে নাযিল হয়েছে যখন তিনি মিসতাহর অপবাদে অংশগ্রহণের জন্য তার খরচ না চালানোর কসম করেন।
২৩. নিশ্চয়ই যারা সতী-সাধ্বী নারীদেরকে ব্যভিচারের অপবাদ দেয় -যে নারীরা এমন অশ্লীলতার ধারে-কাছেও নেই তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত করা হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে আখিরাতের কঠিন শাস্তি।
২৪. কিয়ামতের দিন তাদের উপর এর শাস্তি আপতিত হবে যেদিন তাদের জিহŸাগুলো তাদের বাতিল কথার সাক্ষ্য দিবে। উপরন্তু তাদের হাত-পাগুলোও তাদের কর্মকাÐের সাক্ষ্য দিবে।
২৫. এদিন আল্লাহ তা‘আলা ইনসাফভিত্তিক তাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান দিবেন এবং তারা সেদিন জানতে পারবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সত্য। তাঁর পক্ষ থেকে সংবাদ, ওয়াদা বা হুমকি যাই দেয়া হোক না কেন তা সবই সুস্পষ্ট সত্য। যাতে কোন ধরনের সন্দেহ নেই।
২৬. প্রত্যেক নিকৃষ্ট পুরুষ ও মহিলাকে প্রত্যেক নিকৃষ্ট কথা ও কাজের সাথেই মানায়। তেমনিভাবে সকল পবিত্রতাই অনুরূপ পবিত্র ব্যক্তির সাথেই মানায়। এ সকল পবিত্র পুরুষ ও মহিলা সম্পর্কে নিকৃষ্ট পুরুষ ও মহিলারা যা বলে তা থেকে তারা মুক্ত ও পবিত্র। তাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা যার ভিত্তিতে তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেন এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানিত রিযিক তথা জান্নাত।
২৭. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী মু’মিনরা! তোমরা অন্যের ঘরে ঢুকার সময় সে ঘরের অধিবাসীর অনুমতি ছাড়া তাতে প্রবেশ করো না। উপরন্তু অনুমতির সময় তাদেরকে সালাম দিয়ে এভাবে বলবে: “আস-সালামুআলাইকুম, আমি কি ঢুকতে পারি?” যে অনুমতি নেয়ার ব্যাপারে তোমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে তা তোমাদের জন্য হঠাৎ প্রবেশ করা থেকে অনেক উত্তম। আশা করা যায় যে, তোমরা আদেশের ব্যাপারটি স্মরণ করে তা পালন করবে।
২৮. তোমরা সেই ঘরগুলোতে কাউকে না পেলে -অনুমতি দেয়ার মালিকের পক্ষ থেকে ঢুকার অনুমতি ছাড়া- সেগুলোতে প্রবেশ করবে না। যদি সেগুলোর মালিকরা তোমাদেরকে বলে: ফিরে যাও তাহলে সেখানে না ঢুকে ফিরে যাবে। আল্লাহর নিকট তোমাদের জন্য এটিই পবিত্রতার ভ‚ষণ। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তোমাদের কোন কর্মই তাঁর নিকট গোপন নয়। তিনি অচিরেই তোমাদেরকে সেগুলোর প্রতিদান দিবেন।
২৯. বিনা অনুমতিতে এমন সাধারণ ঘরগুলোতে প্রবেশ করায় তোমাদের কোন অসুবিধে নেই যেগুলো কারো ব্যক্তিগত নয়। যেগুলো তৈরি করা হয়েছে ব্যাপক ফায়েদার জন্য। যেমন: লাইব্রেরী, বাজারের দোকান ইত্যাদি। আল্লাহ জানেন তোমাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য আমল ও অবস্থাগুলো। এগুলোর কোনটিই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই তিনি অচিরেই তোমাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
৩০. হে রাসূল! আপনি মু’মিনদেরকে বলে দিন যেন তারা অবৈধ কিছু তথা মহিলা ও গুপ্তস্থানসমূহ দেখা থেকে নিজেদের চোখগুলোকে বিরত রাখে। আর তারা যেন নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোকে হারাম কাজ থেকে এবং জনসম্মুখে খোলা রাখা থেকে হিফাযত করে। মূলতঃ আল্লাহর হারামকৃত বস্তুর দিকে দৃষ্টি দেয়া থেকে বিরত থাকা তাদের জন্য আল্লাহর নিকট একটি পবিত্রতার ভ‚ষণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাঁর নিকট এর কোন কিছুই গোপন নয়। তিনি অচিরেই তাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
৩১. আপনি মু’মিন মহিলাদেরকে বলে দিন তারা যেন গুপ্তস্থানের প্রতি অবৈধ দৃষ্টি দেয়া থেকে নিজেদের চোখগুলোকে বিরত রাখে। আর যেন তারা পর্দা ও অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে নিজেদের লজ্জাস্থানগুলোকে হিফাযত করে। উপরন্তু তারা যেন নিজেদের সৌন্দর্যকে বেগানা পুরুষের সামনে প্রকাশ না করে। তবে যা সাধারণভাবে প্রকাশ্যে থাকে এবং যা লুকানো সম্ভবপর নয় -যেমন: কাপড়- তাহলে তাতে কোন অসুবিধে নেই। আর যেন তারা নিজেদের কাপড়ের উপরিভাগের খোলা জায়গাগুলো তথা তাদের চুল, চেহারা ও গাড়ের অংশটুকু পর্দা দিয়ে ঢেকে দেয়। উপরন্তু তারা যেন নিজেদের লুক্কায়িত সৌন্দর্য কেবল তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাইয়ের ছেলে, বোনের ছেলে, নিজেদের জন্য নিরাপদ মহিলা, চাই তারা মুসলমান হোক অথবা কাফির, নিজেদের অধীন দাস-দাসী, যৌন কামনামুক্ত অধীনস্থ পুরুষ অথবা যে বাচ্চা ছোট হওয়ার দরুন নরীদের সতর সম্পর্কে অজ্ঞ তার জন্য প্রকাশ করে। আর যেন তারা নিজেদের লুক্কায়িত সৌন্দর্য তথা পায়ের খাড়– এবং এর ন্যায় কোন অলঙ্কার সম্পর্কে অন্যকে জানান দেয়ার জন্য নিজেদের পাযুগল সজোরে ক্ষেপণ না করে। হে মু’মিনরা! তোমরা হারাম দৃষ্টি ইত্যাদির জন্য সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো। যাতে তোমাদের উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে এবং তোমরা আশঙ্কিত বস্তু থেকে নাজাত পেতে পারো।
৩২. হে মু’মিনরা! তোমরা এমন পুরুষদের বিবাহের ব্যবস্থা করো যাদের স্ত্রী নেই এবং এমন স্বাধীন মেয়েদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো যাদের স্বামী নেই। উপরন্তু তোমাদের মধ্যকার মু’মিন গোলাম-বান্দীদেরও বিবাহের ব্যবস্থা করো। তারা যদি গরিব হয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা নিজ বিস্তর অনুগ্রহে তাদেরকে ধনী বানিয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রচুর রিযিকদাতা। তাঁর রিযিক কাউকে স্বচ্ছল না করে পারে না। তিনি তাঁর বান্দাদের সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন।
৩৩. যারা দরিদ্রতার দরুন বিবাহ করতে অক্ষম তারা যেন ব্যভিচারের ক্ষেত্রে সংযম অবলম্বন করে যতক্ষণ না আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজ বিস্তর দয়ায় তাকে স্বচ্ছল করেন। আর যে গোলামরা তাদের মনিবদের সাথে স্বাধীনতার জন্য সম্পদ হস্তার্পণের লিখিত চুক্তির আবেদন করে তাদের মনিবদের উচিত তাদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করা। যদি তারা গোলামদের মাঝে সম্পদ আদায়ের সক্ষমতা এবং ধার্মিকতা দেখতে পায়। আর মনিবরা যেন তাদেরকে আল্লাহর দেয়া সম্পদ থেকে দেয় তথা তাদের সাথে কৃত চুক্তির কিয়দংশ যেন তারা ছাড় দেয়। উপরন্তু তোমরা নিজেদের বান্দিদেরকে তাদের লজ্জাস্থানের মাধ্যমে সম্পদ কামানোর জন্য ব্যভিচারে বাধ্য করো না -যা আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই তার দু’ বান্দির সাথে করেছে- যখন তারা অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকতে ও সংযম অবলম্বনের আশা পোষণ করে। তোমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি তাদেরকে এ কাজে বাধ্য করবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা এ জবরদস্তির পর তাদের গুনাহগুলো ক্ষমাকারী এবং তাদের প্রতি দয়ালু। কারণ, তারা ছিলো তখন বাধ্য। আর গুনাহ হবে তাদেরকে বাধ্যকারীর উপর।
৩৪. হে মানুষ! আমি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ যাতে কোন ধরনের সন্দেহ নেই। তেমনিভাবে আমি তোমাদের প্রতি তোমাদের পূর্ববর্তী মু’মিন ও কাফিরদের দৃষ্টান্তও নাযিল করেছি। আরো নাযিল করেছি এমন উপদেশ যা দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করবে এমন লোকেরা যারা নিজেদের প্রতিপালকের আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকেই ভয় করে।
৩৫. আল্লাহ হচ্ছেন আকাশ ও জমিনের আলো এবং উভয়ের অধিবাসীদের জন্য পথপ্রদর্শক। একজন মু’মিনের অন্তরে তাঁর আলোর দৃষ্টান্ত হলো জানালাবিহীন দেয়ালের একটি তাক বা প্রদীপদানি। যার ভিতরে রয়েছে একটি প্রদীপ। আর প্রদীপটি হলো একটি চকচকে কাঁচের ভিতরে। কাঁচটি যেন মুক্তার ন্যায় একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। যা প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছে বরকতময় যাইতুন গাছের তেল দিয়ে। যে গাছকে সূর্য থেকে কোন কিছুই লুকিয়ে রাখেনি। না সকালে, না সন্ধ্যায়। যে গাছের তেল পরিচ্ছন্নতার দরুন যেন নিজেই জ্বলছে। যদিও আগুন এখনো তাকে স্পর্শ করেনি। আগুন স্পর্শ করলে তাহলে কেমন হতো?! কাঁচের আলোর উপর আবার প্রদীপের আলো। এভাবেই একজন মু’মিনের অন্তর যখন তাতে হিদায়েতের আলো জ্বলে উঠে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের মধ্যকার যাকে চান তাকেই কুর‘আনের অনুসরণের তাওফীক দেন। আল্লাহ তা‘আলা বস্তুগুলোর সদৃশ তথা সেগুলোর দৃষ্টান্ত দিয়েই সেগুলোকে সুস্পষ্ট করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সব কিছুই জানেন। তাঁর নিকট কোন জিনিস গোপন নয়।
৩৬. এ প্রদীপটি জ্বালানো হয় সেই মসজিদগুলোতে যেগুলোর নির্মাণ ও সম্মানকে সুউচ্চ করতে এবং সেখানে আযান, যিকির ও সালাতের মাধ্যমে তাঁর নামকে স্মরণ করতে তিনি আদেশ করেন। যেখানে দিনের শুরু ও শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করা হয়।
৩৭. এমন ব্যক্তিরা তাতে সালাত আদায় করে যাদেরকে ব্যবসা তথা বেচা-কেনা আল্লাহর স্মরণ, পরিপূর্ণরূপে সালাত আদায় এবং খাত অনুসারে যাকাত আদায় থেকে গাফিল করতে পারে না। তারা কিয়ামতের দিনকে ভয় পায়। যেদিন অন্তরগুলো আযাব থেকে মুক্তির আশা ও নিরাশার মাঝে ছটফট করবে। উপরন্তু তাদের চোখগুলোও অস্থির হয়ে যাবে। সেদিন সেগুলো কোন্ দিকে দৃষ্টি দিবে তা বুঝতে পারবে না।
৩৮. তারা আমল করেছে যাতে আল্লাহ তা‘আলা তাদের আমলগুলোর সুন্দর প্রতিদান এবং তাঁর নিজ অনুগ্রহে আরো বাড়িয়ে দিতে পারেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকে তার আমল অনুসারে বিনা হিসাবে রিযিক দিয়ে থাকেন। বরং তাদেরকে তাদের আমলের দ্বিগুণ দিয়ে থাকেন।
৩৯. আর যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে তাদের আমলগুলোর কোন সাওয়াব হবে না। বরং সেগুলো জমিনের নিচু জায়গার মরীচিকার মতো। যাকে পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি মনে করে সেদিকে ছুটে যায়। যখন সে তার নিকট এসে দাঁড়ায় তখন আর পানি খুঁজে পায় না। তেমনিভাবে একজন কাফির মনে করে যে, তার আমলগুলো তার খুব ফায়েদায় আসবে। কিন্তু যখন সে মৃত্যু বরণ করবে এবং তাকে পুনরুত্থিত করা হবে তখন সে আর তার সাওয়াবটুকু দেখতে পাবে না। বরং সে তখন তার প্রতিপালককেই তার সামনে দেখতে পাবে। তিনি তখন তার আমলের পরিপূর্ণ হিসাব নিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা দ্রæত হিসাব গ্রহণকারী।
৪০. অথবা তাদের আমলগুলো গভীর সাগরের অন্ধকারের ন্যায় যার উপর ঢেউ রয়েছে। সেই ঢেউয়ের উপর আবার অন্য ঢেউ রয়েছে। তার উপর আবার মেঘ রয়েছে যা পথপ্রদর্শক নক্ষত্রগুলোকে ঢেকে রাখে। অন্ধকারগুলো একের উপর আরেকটি স্ত‚পীকৃত। এ অন্ধকারগুলোতে পতিত ব্যক্তি যখন নিজের হাতটা বের করে তখন সে কঠিন অন্ধকারের দরুন তাও দেখতে পায় না। তেমনিভাবে একজন কাফির ব্যক্তি। তার উপর স্ত‚পীকৃত হয়েছে অজ্ঞতা, সন্দেহ, অস্থিরতা ও অন্তরের মোহরের অন্ধকারগুলো। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকে ভ্রষ্টতা থেকে উদ্ধারের জন্য হিদায়েতের তাওফীক এবং তাঁর কিতাবের জ্ঞান দিবেন না তখন তার জন্য কোন হিদায়েতই থাকবে না যা দ্বারা সে সঠিক পথের দিশা পাবে। না তার জন্য কোন কিতাব থাকবে যা দ্বারা সে আলোকিত হতে পারবে।
৪১. হে রাসূল! আপনি কি জানেন না যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলার জন্য আকাশ ও জমিনের সকল সৃষ্টি পবিত্রতা বর্ণনা করে। তেমনিভাবে পাখিরাও তাদের ডানাগুলো বাতাসে বিছিয়ে তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে। এ সকল সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা জানেন তাদের মধ্যকার কে মানুষের ন্যায় সালাত আদায় করে। আর পাখির মতো কে তাসবীহ পাঠ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাদের কর্মকাÐের কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়।
৪২. একমাত্র আল্লাহর জন্যই আকাশ ও জমিনের মালিকানা। তাই একমাত্র তাঁর দিকেই কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য ফিরে যেতে হবে।
৪৩. হে রাসূল! আপনি কি জানেন না যে, আল্লাহ তা‘আলা মেঘমালাকে চলমান করে তার একটি অংশকে অন্যটির সাথে মিলিয়ে একটার উপর আরেকটাকে স্ত‚পীকৃত করেন। অতঃপর আপনি মেঘমালার ভেতর থেকে বৃষ্টি হতে দেখেন। আরো নাযিল হয় আকাশের দিককার বিশাল পাহাড়ের ন্যায় ঘন মেঘমালা থেকে কুচি পাথরের ন্যায় পানির জমাটবাঁধা টুকরো। এ শিলা তাঁর বান্দাদের মধ্যকার যাকে চান তার নিকট পৌঁছান আর যার থেকে চান তার থেকে দূরে সরিয়ে দেন। অত্যধিক চমকের দরুন মেঘমালার বিদ্যুতের আলো চোখগুলোকে নষ্ট করে দিতে চায়।
৪৪. আল্লাহ তা‘আলা দীর্ঘ ও খাটো এবং আসা ও যাওয়ার মাধ্যমে দিন ও রাতের আবর্তন ঘটান। এ সকল নিদর্শনাবলী তথা প্রভুত্বের দলীলাদির মধ্যে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য আল্লাহর অসীম ক্ষমতা ও এককত্বের ব্যাপারে শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
৪৫. আল্লাহ তা‘আলা জমিনের উপর বিচরণকারী সকল প্রাণীকে বীর্য থেকে সৃষ্টি করেছেন। সেগুলোর কিছু তো পেটের উপর ভর দিয়ে চলে যেমন: সাপ। আর কিছু আছে দু’পায়ে চলে যেমন: মানুষ ও পাখি। আর কিছু আছে চারপায়ে চলে যেমন: চতুষ্পদ পশু। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত ও অনুল্লিখিত যাই চান তা সৃষ্টি করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু করতে সক্ষম। কোন কিছুই তাঁকে অক্ষম করতে পারে না।
৪৬. নিশ্চয়ই আমি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নাযিল করেছি যাতে কোন সন্দেহ নেই। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা যাকে চান তাকে এমন সরল পথের তাওফীক দেন যাতে কোন ধরনের বক্রতা নেই। যে পথ তাকে জান্নাতের দিকে পৌঁছিয়ে দিবে।
৪৭. মুনাফিকরা বলে: আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করেছি। অতঃপর তাদের একটি দল তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে তারা আল্লাহর পথে জিহাদ ও অন্যান্য আদেশের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে না। অথচ তারাই ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান ও তাঁদের আনুগত্যের দাবি করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য থেকে ফিরে যাওয়া লোকরা মু’মিন নয়। যদিও তারা নিজেদেরকে মু’মিন বলে দাবি করে।
৪৮. যখন এ মুনাফিকদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয় যাতে রাসূল তাদের ঝগড়াপূর্ণ বিষয়ে ফায়সালা করতে পারেন তখন তারা মুনাফিকীর দরুন তাঁর ফায়সালা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৪৯. আর যদি তারা জানে, সত্য তথা প্রাপ্যটুকু তাদেরই জন্য এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অচিরেই তাদের পক্ষেই ফায়সালা করবেন তখন তারা ন¤্র ও বিনীত হয়ে তাঁর নিকটই উপস্থিত হয়।
৫০. এদের অন্তরে কি অবধারিত রোগ রয়েছে, নাকি তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর রিসালাতের ব্যাপারে সন্দেহ করছে, নাকি তারা এ আশঙ্কা করছে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফায়সালার ক্ষেত্রে তাদের উপর যুলুম করবেন? না ব্যাপারটি উক্ত কোন কারণেই নয়। বরং তা কিন্তু তাঁর ফায়সালা থেকে তাদের মুখ ফেরানো এবং তাদের হঠকারিতার দরুন তাদের মনের ভেতরকার কোন একটি কারণেই।
৫১. তবে যখন মু’মিনদেরকে তাদের মাঝে ফায়সালার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয় তখন তাদের কথা এমন হয় যে, তারা বলে: আমরা আপনার কথা শুনেছি ও আপনার আদেশের আনুগত্য করেছি। বস্তুতঃ এ সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারীরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল।
৫২. মূলতঃ যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে এবং তাঁদের ফায়সালাকে মাথা পেতে গ্রহণ করে উপরন্তু পাপরাশির পরিণতিকে তারা ভয় পায় এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে কেবল তাঁর আযাবের ভয়েই তারা আতঙ্কিত থাকে একমাত্র তারাই দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ পেয়ে পুরস্কৃত হবে।
৫৩. মুনাফিকরা যথাসম্ভব আল্লাহর উপর তাদের চ‚ড়ান্ত কঠিন কসম খেয়ে বলে: আপনি যদি নিশ্চয়ই তাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার আদেশ করেন তাহলে তারা অবশ্যই বের হবে। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলুন: তোমরা কসম খেয়ো না। তোমাদের মিথ্যা এবং তোমাদের তথাকথিত আনুগত্য সত্যিই সুপ্রসিদ্ধ। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাঁর নিকট তোমাদের কর্মকাÐের কোন কিছুই গোপন নয় যতোই তোমরা সেগুলোকে লুকিয়ে রাখো না কেন।
৫৪. হে রাসূল! আপনি এ মুনাফিকদেরকে বলুন: তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। তোমরা যদি তাঁদের আদেশকৃত আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে জেনে রাখো, তাঁর দায়িত্ব হলো পৌঁছানো আর তোমাদের দায়িত্ব হলো আনুগ্য করা ও তাঁর আনীত বিধান মেনে চলা। যদি তোমরা তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে একমাত্র তাঁরই আনুগত্য করো তাহলে তোমরা অবশ্যই সত্য পথের দিশা পাবে। বস্তুতঃ রাসূলের দায়িত্ব হলো সুস্পভাবে পৌঁছিয়ে দেয়া। তাঁর দায়িত্ব নয় তোমাদেরকে হিদায়েতের উপর উঠানো এবং তাতে তোমাদেরকে বাধ্য করা।
৫৫. আল্লাহতে বিশ্বাসী ও নেক আমলকারী মু’মিনদের সাথে আল্লাহ তা‘আলা এ ওয়াদা করছেন যে, তিনি তাদেরকে তাদের শত্রæদের উপর বিজয়ী করবেন এবং তিনি তাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানাবেন যেমনিভাবে তিনি পূর্বেকার মু’মিনদেরকে সেখানকার প্রতিনিধি বানিয়েছেন। উপরন্তু তিনি তাদের ধর্ম তথা আল্লাহর পছন্দনীয় ইসলাম ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত ও পরাক্রমশালী করবেন। তিনি আরো ওয়াদা করছেন যে, তিনি তাদের ভীতিকর অবস্থাকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করবেন। এর বিনিময়ে যে, তারা আমার একক ইবাদাত করবে। আমার সাথে কোন বস্তুকে শরীক করবে না। আর যারা এ নিয়মতগুলো পাওয়ার পরও কুফরি করবে তারা মূলতঃ আল্লাহর আনুগত্যের বাইরেই অবস্থানকারী তথা বিদ্রোহী।
৫৬. তোমরা পরিপূর্ণভাবে সালাত আদায় করো, নিজেদের সম্পদগুলোর যাকাত দাও এবং রাসূলের আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁর আনুগত্য করো তাহলে তোমরা আল্লাহর রহমত পেয়ে ধন্য হবে।
৫৭. হে রাসূল! আপনি মনে করবেন না যে, যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করেছে তাদের উপর যখন আমি আযাব নাযিল করতে চাইবো তখন তারা আমার কাছ থেকে পালিয়ে যেতে পারবে। বরং কিয়ামতের দিন তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। তাদের কতোই না নিকৃষ্ট পরিণাম যাদের পরিণাম হবে জাহান্নাম।
৫৮. হে আল্লাহতে বিশ্বাসী ও তাঁর শরীয়তের উপর আমলকারী মু’মিনরা! তোমাদের গোলাম ও বান্দীরা এবং যে স্বাধীন বাচ্চারা এখনো সাবলক বয়সে পৌঁছায়নি তারা যেন তিনটি সময়ে তোমাদের কাছ থেকে অবশ্যই অনুমতি চায়: ফজরের সালাতের আগে তথা ঘুমের পোশাক ছেড়ে জেগে থাকার পোশাক পরিবর্তনের সময়, দুপুরের সময় যখন তোমরা সামান্য ঘুমের জন্য নিজেদের কাপড়গুলো খুলে ফেলো এবং ইশার সালাতের পর। কারণ, তা হলো তোমাদের ঘুম এবং জেগে থাকার পোশাক খুলে ঘুমের পোশাক পরিধানের সময়। এ তিনটি মূলতঃ তোমাদের জন্য গোপনীয়তার সময়। সেগুলোতে তারা অনুমতি ছাড়া তোমাদের নিকট প্রবেশ করবে না। এ তিনটি সময় ছাড়া অন্য যে কোন সময়ে তারা বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করলে না তোমাদের কোন অসুবিধে রয়েছে, না তাদের। বস্তুতঃ তারা বেশি ঘুরাফেরা করা লোক। এ সময়গুলোতে তোমাদের একজন অন্যের নিকট ঘুরতে যায়। তাই অনুমতি সাপেক্ষে সবসময় তাদেরকে ঢুকতে দেয়া সত্যিই কষ্টকর। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য অনুমতির বিধানসমূহ বর্ণনা করেছেন তেমনিভাবে তিনি তোমাদের জন্য এমন আয়াতগুলো বর্ণনা করেন যেগুলো তাঁর দেয়া শরীয়তের বিধানাবলী বুঝায়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের সুবিধাদি জানেন। তিনি তাদের জন্য বিধান রচনায় অতি প্রাজ্ঞ।
৫৯. যখন তোমাদের বাচ্চারা সাবালক বয়সে পৌঁছাবে তখন তারা যেন সর্বদা ঘরে ঢুকার সময় অনুমতি প্রার্থনা করে। যেমন ইতিপূর্বে বড়দের সম্পর্কে উল্লিখিত হয়েছে। যেমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য অনুমতি চাওয়ার বিধান বর্ণনা করেছেন তেমনিভাবে তিনি তোমাদের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের সকল সুবিধা সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি তাদের শরীয়ত রচনায় অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
৬০. আর বয়স্কা নারীরা যাদের বয়স বেশি হওয়ার দরুন তারা ঋতু¯্রাবী ও গর্ভবতী হয় না এবং বিবাহের প্রতিও তাদের কোন আগ্রহ নেই তাদের কোন গুনাহ হবে না যদি তারা নিজেদের কিছু কাপড় খুলে রাখে যেমন: নিকাব ও গায়ের চাদর। তবে তারা যেন ভেতরের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে যা ঢেকে রাখার জন্য তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে। তারপরও তারা যদি এ কাপড়গুলো খোলে না রাখে তাহলে তা তাদের জন্য খোলে রাখার চেয়ে অনেক উত্তম হবে। যাতে পুরোপুরিভাবে তাদের গোপনীয়তা ও সাধুতা রক্ষা পায়। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা তাদের সব কথা শুনেন এবং তাদের সকল কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। এগুলোর কোন কিছুই তাঁর নিকট গোপন নয়। তাই অচিরেই তিনি তাদেরকে এগুলোর প্রতিদান দিবেন।
৬১. যে অন্ধ তার দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে তার কোন গুনাহ নেই। তেমনিভাবে খোঁড়ারও কোন গুনাহ নেই। উপরন্তু অসুস্থেরও কোন গুনাহ নেই যদি তারা নিজেদের সাধ্যের বাইরের শরয়ী দায়িত্বগুলো পরিত্যাগ করে। যেমন: আল্লাহর পথে জিহাদ। আর হে মু’মিনরা! তোমাদের জন্য কোন ক্ষতি নেই নিজেদের ঘর থেকে খেলে, না তোমাদের ছেলেদের ঘর থেকে, না তোমাদের বাপ-দাদা, মা-নানী, ভাই, বোন, চাচা, ফুফু, মামা কিংবা খালাদের ঘর থেকে অথবা ওই সকল ঘর থেকে যেগুলোর হিফাযতের দায়িত্ব তোমাদের হাতে ন্যস্ত যেমন: বাগানের পাহারাদার। না তোমাদের কোন অসুবিধে রয়েছে নিজেদের বন্ধুর ঘর থেকে খাওয়ায়। কারণ, স্বভাবতঃ তার মন এতে খুশি। না তোমাদের কোন গুনাহ রয়েছে সম্মিলিত কিংবা একা খাওয়ায়। আর যদি তোমরা উল্লিখিত ঘর কিংবা অন্যান্য ঘরসমূহে প্রবেশ করো তাহলে সেখানকার অধিবাসীদেরকে এ বলে সালাম দাও: আস-সালামু আলাইকুম। তবে সেগুলোতে কেউ না থাকলে তোমরা নিজেদের উপর এ বলে সালাম দাও: আস-সালামু আলাইনা ওয়া‘আলা ইবাদিল্লাহিস-সালিহীন। যা আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ বরকতময় সম্ভাষণ। যা তোমাদের মাঝে মায়া ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দিবে। যা পবিত্রও বটে যা শুনলে শ্রোতার মন আনন্দে ভরে যায়। এ সূরার পূর্বের বর্ণনার ন্যায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিদর্শনসমূহ বর্ণনা করেন যাতে তোমরা বুঝে সেগুলোর উপর আমল করতে পারো।
৬২. নিশ্চয়ই সত্যবাদী ঈমানদার মু’মিন হলো ওরা যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান এনেছে। যখন তারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে মুসলমানদের সুবিধার জন্য কোন কাজে একত্রিত হয় তখন তারা তাঁর নিকট থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি না চেয়ে সেখান থেকে চলে যায় না। হে রাসূল! যারা আপনার কাছ থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি চায় তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর সত্যিকারের ঈমান রাখে। তাই তারা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনার অনুমতি চাইলে আপনি তাদের যাকে চান অনুমতি দিন। আর তাদের গুনাহের জন্য মাগফিরাত কামনা করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর তাওবাকারী বান্দাদের গুনাহ ক্ষমাকারী এবং তাদের প্রতি অতি দয়ালু।
৬৩. হে মু’মিনরা! তোমরা আল্লাহর রাসূলকে সম্মান করো। তোমরা তাঁকে ডাকলে তাঁর নামে ডাকবে না। যেমন: হে মুহাম্মাদ! অথবা তাঁর বাপের নামে যেমন: হে আব্দুল্লাহর ছেলে! যেমনিভাবে তোমাদের কেউ কেউ অন্যের সাথে করে থাকে। বরং তোমরা বলবে: হে আল্লাহর রাসূল! হে আল্লাহর নবী! আর যদি তিনি তোমাদেরকে সমষ্টিগত কোন কাজে ডাকেন তখন তোমরা তাঁর ডাকাকে তোমাদের মধ্যকার স্বভাবতঃ সাধরণ কোন বিষয়ে কারো ডাকের মতো মনে করবে না। বরং তোমরা সে ডাকে দ্রæত সাড়া দিবে। আল্লাহ তা‘আলা জানেন তোমাদের মধ্যে কারা বিনা অনুমতিতে গোপনভাবে চলে যায়। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাসূলের আদেশের বিরোধিতা করে তারা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন বালা-মুসীবত ও পরীক্ষা অথবা এমন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি আসার ভয় পায় যার উপর তারা কখনোই ধৈর্য ধরতে পারবে না।
৬৪. কেবল আল্লাহর জন্যই আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি, মালিকানা ও পরিচালনা। হে মানুষ! তিনি জানেন তোমরা কোন্ অবস্থায় আছো। তাঁর নিকট এর কোন কিছুই গোপন নয়। যখন তারা মৃত্যুর পর পুনরুত্থান তথা কিয়ামতের দিন তাঁর নিকট ফিরে আসবে তখন তিনি তাদেরকে তাদের দুনিয়ার আমলসমূহের সংবাদ দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুই জানেন। তাঁর নিকট আকাশ ও জমিনের কোন কিছুই গোপন নয়।