surah.translation .

১. সৃষ্টিকুলের যা কিছু আসমান ও যমীনে রয়েছে তারা সবাই আল্লাহকে সর্ব প্রকার ত্রæটি ও বেমানান বস্তু থেকে মুক্ত ও পবিত্র ঘোষণা করছে। সকল আধিপত্য এককভাবে তাঁরই। তাই তিনি ব্যতীত কোন বাদশাহ নেই। তাঁর জন্যই রয়েছে উত্তম প্রশংসা। তিনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। কোন কিছুই তাঁকে অপারগ করতে পারে না।
২. হে মানব সমাজ! তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তবে তোমাদের মধ্যে কেউ কাফির ফলে তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আর কেউ মুমিন ফলে তার ঠিকানা হবে জান্নাত। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের আমল সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তাঁর নিকট তোমাদের কোন আচরণই গোপন থাকে না এবং তিনি অচিরেই এর প্রতিদান দিবেন।
৩. আল্লাহ আসমান ও যমীনকে সত্যিকারার্থেই সৃষ্টি করেছেন। এতদুভয়কে তিনি অনর্থক সৃষ্টি করেন নি। হে মানব সমাজ! তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের আকৃতিকে তাঁর নিজ অনুগ্রহে সুন্দর করেছেন। তিনি চাইলে তা কুৎসিত করতে পারতেন। এককভাবে কিয়ামত দিবসে তাঁর নিকটই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। ফলে তিনি তোমাদের কাজের বদলা দিবেন। ভলো কাজের প্রতিদান হবে ভালো। আর মন্দ কাজের প্রতিদান হবে মন্দ।
৪. তিনি আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবই জানেন। তিনি আরো জানেন তোমরা যা প্রকাশ করো আর যা গোপন করো। তিনি বক্ষগুলোতে ভালো-মন্দ যা রয়েছে তা সবই জানেন। তাঁর নিকট এ সবের কোন কিছুই গোপন থাকে না।
৫. হে মুশরিকরা! তোমাদের নিকট কি তোমাদের পূর্বেকার অবিশ্বাসীদের সংবাদ আসেনি?! যেমন: নূহ, আদ, সামূদ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের। তারা দুনিয়াতে কুফরীর শাস্তি আস্বাদন করেছে। উপরন্তু তাদের জন্য রয়েছে পরকালের কষ্টদায়ক শাস্তি। হ্যাঁ, অবশ্যই তোমাদের নিকট তা এসেছে। তাই তোমরা তাদের পরিণতি থেকে উপদেশ গ্রহণ করো এবং তাদের মতো তোমাদের উপর শাস্তি আসার পূর্বেই তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো।
৬. তাদের নিকট শাস্তি এ জন্য আসলো যে, তাদের নিকট রাসূলগণ আল্লাহর সুস্পষ্ট দলীল ও প্রমাণাদি নিয়ে আগমন করলে রাসূলগণ মানব শ্রেণী থেকে কেন আগমন করলেন এ আপত্তি উত্থাপন করে তারা বললো যে, মানুষ আমাদেরকে কী পথ দেখাবে? এ কথা বলে তারা কুফরী করে ঈমান থেকে বিমুখ হয়ে গেলো। এতে করে তারা আল্লাহর কোনরূপ ক্ষতি করতে পারলো না। বরং তিনি তাদের ঈমান ও আনুগত্য থেকে বেপরওয়া হলেন। কেননা, তাদের আনুগত্য তাঁর কোন কিছুই বৃদ্ধি করে না। বস্তুতঃ আল্লাহ ধনাঢ্য। তিনি তাঁর বান্দাদের মুখাপেক্ষী নন। তিনি তাঁর কথা ও কাজে প্রশংসনীয়।
৭. কাফিররা ধারণা করে নিয়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে মরণের পর পুনরুত্থিত করবেন না। হে রাসূল! আপনি এ সব পুনরুত্থান অস্বীকারকারীদেরকে বলে দিন যে, হ্যাঁ আমার রবের শপথ, অবশ্যই তোমরা কিয়ামত দিবসে পুনরুত্থিত হবে। অতঃপর দুনিয়ার কৃতকর্মের সংবাদ তোমাদেরকে দেয়া হবে। আর এ পুনরুত্থান আল্লাহর জন্য অতি সহজ। কেননা, তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। অতএব, তিনি তোমাদেরকে মৃত্যুর পর হিসাব ও প্রতিদানের উদ্দেশ্যে পুনরুত্থান দানে অবশ্যই সক্ষম।
৮. হে মানব সমাজ! তোমরা আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের উপর ঈমান আনো এবং ওই কুরআনের উপরও ঈমান আনো যা আমি নিজ রাসূলের উপর অবতীর্ণ করেছি। বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের আমল সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তাঁর নিকট তোমাদের কোন আমলই গোপন নয় এবং তিনি এর প্রতিদান দিবেন।
৯. হে রাসূল! আপনি সেই দিনের কথা স্মরণ করুন যে কিয়ামত দিবসে আমলের প্রতিদান দেয়ার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তোমাদেরকে সমবেত করবেন। এই সেই দিন যাতে কাফিরদের ক্ষতি ও ঘাটতি প্রকাশ পাবে। যখন মুমিনরা জান্নাতে থাকা জাহান্নামীদের বাড়ীগুলোর উত্তারাধিকারী হবে। আর জাহান্নামীরা জাহান্নামে থাকা জান্নাতীদের আবাসনগুলোর উত্তরাধিকারী হবে। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ইমান আনে ও সৎ আমল করে আল্লাহ তার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেন। তাকে এমন সব জান্নাতে প্রবিষ্ট করেন যেগুলোর অট্টালিকা ও বৃক্ষরাজির তলদেশ দিয়ে নদী-নালা প্রবাহিত হয়। তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। সেখান থেকে তারা কখনো বের হবে না। আর না তাদের থেকে তাঁর নিয়ামত কখনো বিচ্ছিন্ন হবে। তারা যা লাভ করলো তা এমন সফলতা যার সাথে অন্য কোন সফলতার তুলনা হয় না।
১০. যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করে এবং আমার সে সব আয়াতকে অস্বীকার করে যেগুলোকে আমি নিজ রাসূলের উপর অবতীর্ণ করেছি তারা জাহান্নামী। তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করবে। বস্তুতঃ কতোই না মন্দ তাদের ঠিকানা।
১১. কারো ব্যক্তি সত্তা, সম্পদ কিংবা সন্তানের উপর কোন বিপদ আপতিত হলে তা হয়ে থাকে কেবল আল্লাহর ফায়সালা ও তাঁর নির্ধারণ অনুযায়ী। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর ফায়সালা ও তাকদীরে বিশ্বাস করে আল্লাহ তার অন্তরকে তাঁর নির্দেশ মানার ও তাঁর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকার প্রতি সুপথগামী করেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরিজ্ঞাত। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না।
১২. তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। যদি তোমরা তাঁর রাসূল আনিত বিষয় থেকে বিমুখ হও তাহলে এই বিমুখতার পাপ তোমাদেরকেই পাবে। বস্তুতঃ আমার রাসূলকে আমি যা পৌঁছে দিতে আদেশ করেছি তা ছাড়া অন্য কিছু তাঁর উপর বর্তায় না। তিনি তোমাদের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য আদিষ্ট বিষয় পৌঁছে দিয়েছেন।
১৩. আল্লাহই প্রকৃত মাবূদ; তিনি ব্যতীত অন্য কোন প্রকৃত মাবূদ নেই। মু’মিনদের উচিৎ তারা যেন নিজেদের প্রতিটি বিষয়ে এককভাবে কেবল আল্লাহর উপরই ভরসা করে।
১৪. হে মু’মিন সম্প্রদায়! তোমরা যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছো এবং তোমাদের জন্য নির্ধারিত তাঁর বিধান অনুযায়ী আমল করে থাকো তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে তোমাদের শত্রæ রয়েছে। যারা তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর পথে জিহাদ করা থেকে বিরত ও পিছিয়ে রাখে। তাই তোমরা তাদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া থেকে সতর্ক থাকো। তবে তোমরা যদি তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করে দাও এবং তা বিষ্মৃত হও উপরন্তু তা গোপন রাখো তাহলে আল্লাহ তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন ও তোমাদের উপর দয়া করবেন। বস্তুতঃ কর্ম যেমন হয় ফলাফলও তেমনই হয়ে থাকে।
১৫. বস্তুতঃ তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। তাই তারা কখনো কখনো তোমাদেরকে হারাম উপর্জন ও আল্লাহর আনুগত্য পরিহারে বাধ্য করবে। বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যকে সন্তানদের আনুগত্য ও সম্পদের মোহ-মায়ার উপর প্রাধান্য দেয় তার জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে মহা প্রতিদান। আর এ মহা প্রতিদান হলো জান্নাত।
১৬. তাই তোমরা আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে সাধ্যমতো তাঁকে ভয় করে তাঁর আনুগত্যের পথে চলো। আর তাঁর কথা শ্রবণ করো এবং আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের আনুগত্য করো। তেমনিভাবে তাঁর প্রদত্ত সম্পদকে কল্যাণের কাজে ব্যয় করো। বস্তুতঃ যাকে তার আত্মার অনিষ্ট থেকে রেহাই দেয়া হলো তারাই কাম্য বস্তু লাভে ও অপ্রিয় বস্তু থেকে মুক্তি অর্জনে ধন্য।
১৭. তোমরা যদি নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করার মাধ্যমে তাঁকে উত্তম ঋণ প্রদান করে থাকো তাহলে তিনি তোমাদের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন। একটি পুণ্যকে দশ থেকে সাত শত গুণে। বরং তিনি যতো চান ততো বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ এমন কৃতজ্ঞ যিনি কম আমলের উপর বেশী প্রতিদান দেন। তিনি সহনশীল; ত্বরিত শাস্তি প্রদান করেন না।
১৮. মহান আল্লাহ উপস্থিত-অনুপস্থিত সব কিছুর জ্ঞান রাখেন। তাঁর নিকট এ সবের কোন কিছুই গোপন থাকে না। তিনি পরাক্রমশালী; তাঁকে কোন কিছুই পরাস্ত করতে পারে না। তিনি তদীয় সৃষ্টি, বিধান ও ফায়সালায় প্রজ্ঞাবান।