ترجمة سورة سبأ

الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم
ترجمة معاني سورة سبأ باللغة البنغالية من كتاب الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم .

১.ওই আল্লাহর উদ্দেশ্যে সকল প্রশংসা যার হাতে আসমান ও যমীনের সৃষ্টি, রাজত্ব ও পরিচালনা। আর তাঁর প্রশংসা পরকালেও। তিনি তাঁর সৃষ্টি ও পরিচালনায় প্রজ্ঞাময়। তাঁর বান্দাদের অবস্থা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। তাঁর নিকট এর কোন কিছুই গোপন নয়।
২. যমীনে যে পানি ও শস্য প্রবেশ করে তিনি তা জানেন এবং এথেকে যে শস্য বা অন্য কিছু বের হয় তিনি তাও জানেন। আসমান থেকে বৃষ্টি, ফিরিশতা ও রিযিক হিসাবে যা অবতরণ করে তিনি তাও জানেন। আসমানে ফিরিশতা, তাঁর বান্দাদের আমল ও আত্মাসহ যত কিছু উঠে সব কিছুই তিনি জানেন। তিনি তাঁর মু’মিন বান্দাদের প্রতি দয়ার্দ্র। আর তাঁর প্রতি তাওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।
৩. আর যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছে তারা বলে: আমাদের নিকট আদৗ কিয়ামত আসবে না। হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: অবশ্যই তোমাদের নিকট কিয়ামত আসবে; তোমরা যাকে অবিশ্বাস করো। তবে তার সময় আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। তিনিই কিয়ামতসহ অন্যান্য গাইবের খবর রাখেন। আসমান ও যমীনের সর্বাপেক্ষা ক্ষুদ্র প্রাণী পিপীলিকার ওযনও তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। আর তদাপেক্ষা ছোট কিংবা বড় সবই সুস্পষ্ট লিপিকায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। যা হচ্ছে লাওহে মাহফুজ। যাতে কিয়ামত পর্যন্ত ঘটনীয় সব কিছুই লেখা আছে।
৪. আল্লাহ লাওহে মাহফুজে যা স্থির করেছেন তা এজন্য যে, যাতে করে ঈমানদার ও নেক আমলকারীদেরকে প্রতিদান দিতে পারেন। উক্ত বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যবান লোকদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে তাদের পাপের ক্ষমা। ফলে তিনি তাদেরকে এর কারণে পাকড়াও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে সম্মানী জীবিকা। যা হচ্ছে কিয়ামত দিবসে তাঁর জান্নাত।
৫. আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াতসমূহ বাতিল করার উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা চালিয়ে বলছে যে, এগুলো যাদু। আর আমার রাসূলকে বলছে: গণক, যাদুকর ও কবি। এসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারীদের জন্য রয়েছে মন্দ ও কঠিন শাস্তি।
৬. আর সাহাবীদের মধ্যকার আলিম সমাজ ও আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে তারা সাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ আপনার প্রতি যে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করেছেন তাই হক। যাতে কোনরূপ সন্দেহ নেই। আর এটিই এমন পরাক্রমশালীর দিকে পথ নির্দেশ করে যাঁকে পরাস্তকারী কেউ নেই। যিনি ইহ ও পরকালে প্রশংসিত।
৭. আর যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছে তারা একে অপরকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক আনিত বিষয়ের উপর আশ্চর্য হয়ে ঠাট্টাচ্ছলে বলেছে, আমরা কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যক্তির সন্ধান দিব, যে তোমাদেরকে একথার সংবাদ দেয় যে, তোমরা যখন মৃত্যু বরণ করবে ও তোমরা টুকরা টুকরা হয়ে যাবে তখন তোমাদেরকে পুনর্বার জীবিত করা হবে?!
৮. তারা বলেছে, এ ব্যক্তিকি আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করছে? ফলে আমাদের মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের কথা বলছে।না কি সে পাগল। না বুঝেই তারা এমন কথা বলে। যার কোন বাস্তবতা নেই। বাস্তব কথা তাদের ধারণার অনুকূলে নয়। বরং আসল কথা হচ্ছে, যারা পরকালে বিশ্বাসী নয় তারা কিয়ামত দিবসে কঠিন শাস্তির মধ্যে নিমজ্জিত থাকবে। আর দুনিয়ার জীবনে তারা হক থেকে বহু দূরে অবস্থান করছে।
৯. এ সব পুনরুত্থানের প্রতি মিথ্যারোপকারীরা কি দেখেনা তাদের সামনে যে যমীন রয়েছে আর পেছনে যে আসমান রয়েছে? আমি চাইলে তাদের পায়ের নিচ থেকে যমীনকে ধ্বসিয়ে দিতে পারি। এমনিভাবে চাইলে তাদের উপর আসমান থেকে এক টুকরো ভূপাতিত করতে পারি। এতে অবশ্যই প্রত্যেক ওই সব দাস বান্দার জন্য অকাট্য নিদর্শন রয়েছে যে স্বীয় প্রতিপালকের আনুগত্যের প্রতি বেশী বেশী প্রত্যাবর্তনকারী। সে এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমতার উপর প্রমাণ গ্রহণ করবে। কেননা, যিনি এই কাজের উপর ক্ষমতাবান তিনি তোমাদের মৃত্যু ও শরীর ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর পুনরুত্থানে সক্ষম।
১০. আর আমি দাউদকে আমার পক্ষ থেকে নবুওয়াত ও রাজত্ব প্রদান করেছি এবং আমি পাহাড়কে বলেছি, আপনি দাউদের সাথে তাসবীহ পাঠ করো। এমনিভাবে পক্ষিরাজিকেও নির্দেশ দিয়েছি। আর আমি তাঁর জন্য লোহাকে নরম করে দিয়েছি যাতে তিনি ইচ্ছামত যেকোন বস্ত্র তৈরী করতে পারেন।
১১. হে দাউদ!আপনি এমন বর্ম তৈরী করুন যদ্বারা আপনার যোদ্ধারা তাদের শত্রæদের আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে। আর আংটাগুলো সূ²ভাবে নির্ণয় করুন। যাতে এমন বেশী ছোট না হয় যার ফলে আটকে থাকে না। আবার এমন বড় না হয় যার ফলে প্রবেশ করে না। আর নেক আমল করো। তোমরা যা কিছু করো আমি সবই দেখি। আমার নিকট কিছুই গোপন থাকে না এবং আমি তার প্রতিদান দিবো।
১২. আর আমি সুলাইমান বিন দাউদের জন্যে বায়ুকে বাধ্য করে দিয়েছি। যে সকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করে আর বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করে। আর আমি তাঁর জন্য পিতলের পদার্থকে তরল করে দিয়েছি। যাতে করে তিনি এর মাধ্যমে যা চান তৈরী করেন। আর আমি তাঁর জন্য জিনদেরকে বাধ্য করে দিয়েছি। যারা তাঁর নির্দেশে তাঁর সামনে কাজ করে। তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশিত কাজ থেকে বিরত থাকে তাকে আমি প্রজ্জলিত আগুনের শাস্তি ভোগাবো।
১৩. এসব জিনেরা সুলাইমান যা চান তা করে দেয়। যেমন: নামাযের জন্য মসজিদ নির্মাণ, অট্টালিকা তৈরি, চিত্রাঙ্কন, পানির বড় কুপ, ভারি ডেগ যা এত বড় যে, তা উঠানো কষ্টকর। আমি তাদেরক বলেছি, হে দাউদ পরিবার! তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহ প্রদত্ত নিআমতের শুকরিয়া স্বরূপ আমল করো। বস্তুতঃ আমার প্রদত্ত নিআমতের শুকরিয়া স্বরূপ আমলকারীদের সংখ্যা অতি অল্প।
১৪. আর আমি যখন সুলাইমানের জন্য মৃত্যুর ফয়সালা করলাম তখন জিনদেরকে তা জানানো হয়নি। যখন উই পোকা তাঁর লাঠি খেয়ে ফেলল এরপর তিনি পড়ে গেলেন তখন জিনরা বুঝতে পারল যে, তারা গায়েবের খবর জানে না। কেননা, তারা যদি জানত তবে সুলাইমানের জন্য তারা এই কঠোর পরিশ্রমের কাজে লেগে থাকত না। যা তারা তাঁকে জীবিত অবস্থায় পর্যবেক্ষক মনে করার ফলে চালিয়ে যাচ্ছিল।
১৫. সাবা সম্প্রদায়ের আবাসস্থলে আল্লাহর কুদরত ও তাদের উপর তাঁর অনুগ্রহের সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। আর তা হচ্ছে জান্নাত; যার একটি ডান দিকে আর অপরটি বাম দিকে। আমি তাদেরকে বললাম: তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের জীবিকা ভক্ষণ করো, আর তাঁর নিআমতের শুকরিয়া আদায় করো। এটি হচ্ছে উত্তম নগরী। আর ইনি হচ্ছেন ক্ষমাশীল প্রতিপালক। যে তাঁর নিকট তাওবা করে তিনি তা কবুল করেন।
১৬. তারা আল্লাহর শুকরিয়া ও তদীয় রাসূলদের উপর ঈমান আনয়ন থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখল। ফলে আমি তাদের নিয়ামতকে গজবে পরিবর্তন করে তাদেরকে শাস্তি দিলাম। তাদের উপর প্রচÐ ¯্রােত চালিয়ে দিলাম; যা তাদের বাঁধ ভেঙ্গে দিল ও ক্ষেত ডুবিয়ে দিল। আর তাদের দু’টি বাগানের পরিবর্তে এমন দু’টি বাগান দিলাম যেগুলো ফল উৎপন্ন করে। তবে তার স্বাদ তিতা। আর এতদুভয়ে রয়েছে ফল বিহীন ঝাউ গাছ ও কিছু বরই গাছ।
১৭. তাদের এই উপভোগকৃত নিআমতের পরিবর্তন এজন্য হল যে, তারা কুফরি ও আল্লাহর নিআমতের না শুকরী করেছে। বস্তুতঃ আমি এমন কঠোর শাস্তি মহান আল্লাহর নিয়ামত অস্বীকারকারী ও কাফির সম্প্রদায় ব্যতীত অন্য কাউকে প্রদান করি না।
১৮. আর আমি ইয়ামানের সাবাবাসী ও সিরিয়ার গ্রামসমূহ যেগুলোতে আমি বরকত প্রদান করেছি সেগুলোর মধ্যবর্তী স্থানে কিছু কাছাকাছি অবস্থানকারী গ্রাম স্থাপন করেছি এবং তার মাঝে ভ্রমণকে নির্ধারিত সময়সাপেক্ষ করেছি। ফলে তারা সহজে এক গ্রাম থেকে অপর গ্রামে ভ্রমণ করে সিরিয়া পর্যন্ত পৌঁছুতে পারে। আর আমি তাদেরকে বলেছি: তোমরা ইচ্ছামত শত্রæ, ক্ষুধা ও পিপাসা থেকে নির্ভয়ে দিনে ও রাতে ভ্রমণ করো।
১৯. তারা তাদের জন্য আল্লাহর প্রদত্ত দূরত্ব কমিয়ে আনার নিয়ামতকে বর্জন করল এবং বলল: হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি এসব গ্রামগুলোকে সরিয়ে ফেলার মাধ্যমে আমাদের সফরের দূরত্বকে প্রলম্বিত করুন। যাতে আমরা ভ্রমণের কষ্ট অনুভব করতে পারি, আর আমাদের বাহনের গুণাগুণ প্রকাশ পায়। ফলে আল্লাহর নিয়ামতকে বর্জন ও শুকরিয়া আদায় না করা এবং তাদের মধ্যকার গরীবদের সাথে হিংসার মাধ্যমে তারা তাদের নফসের উপর জুলুম করল। তাই আমি তাদেরকে ইতিহাসে উল্লেখ করার মত অবস্থায় পৌঁছে দিলাম। পরবর্তী লোকেরা তাদের অবস্থা বর্ণনা করতে থাকল। আর আমি তাদেরকে দুনিয়াতে বহুদূর পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত করে দিলাম যে, কেউ কারো খবর পর্যন্ত জানার উপায় রইল না। এই সাবা সম্প্রদায়ের উপর অনুগ্রহ ও তাদের কুফরি এবং নিআমতের না শুকরির কারণে তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণে প্রত্যেক এমনসব ব্যক্তিদের জন্য উপদেশ রয়েছে যারা আল্লাহর আনুগত্যে, পাপ পরিহারে ও বিপদে ধৈর্যশীল।
২০. আর ইবলীস যে ধারণা করত যে, সে তাদেরকে হক থেকে পথভ্রষ্ট করবে তা তাদের উপর বাস্তবায়ন করেছে। ফলে তারা কুফরি ও ভ্রষ্টতায় তার অনুসরণ করেছে কেবল মুমিনদের কিছু সংখ্যক লোক ব্যতীত। কেননা, তারা তার আনুগত্য না করার মাধ্যমে তার আশা পূর্ণ হতে দেয়নি।
২১. তাদের উপর ইবলিসের এমন কোন শক্তি ছিল না যদ্বারা সে তাদেরকে পদানত করে পথভ্রষ্ট করতে পারত। সে কেবল তাদেরকে চমক লাগাত ও বিভ্রান্ত করত। বরং আমি তাকে এই কাজের অনুমোদন দিয়েছি। যাতে আমি জানতে পারি যে, কে পরকাল ও তার প্রতিদানে বিশ্বাসী। আর কে সে ব্যাপারে সন্দিহান। আর হে নবী! আপনার প্রতিপালক সর্ব বিষয়ের সংরক্ষক। তিনি তাঁর বান্দাদের আমল সংরক্ষণ করেন এবং তিনি তাদের প্রতিদান দিবেন।
২২. হে রাসূল! এসব মুশরিকদেরকে বলে দিন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে তোমাদের দেবতা বানিয়েছো তাদেরকে ডাকো। যেন তারা তোমাদের উপকার কিংবা অপকার সাধন করে। তারা আসমান-যমীনে এক তিল পরিমাণ কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। আর তাদের জন্য তাতে আল্লাহর সাথে না কোন অংশীদার রয়েছে। আর না কোন সহযোগী। তিনি অংশিদার ও সহযোগী থেকে মুক্ত।
২৩. তিনি যাকে অনুমতি প্রদান করবেন সে ব্যতীত তাঁর নিকট কেউ সুপারিশ করতে পারবে না। আর আল্লাহ তাঁর পছন্দ ব্যতীত কাউকে সুপারিশের অনুমতি প্রদান করবেন না তাঁর মাহাত্ম্যের কারণে। আর তাঁর মাহাত্ম্য এত উঁচু পর্যায়ের যে, তিনি যখন আসমানে কথা বলেন তখন ফিরিশতাগণ তাঁর কথার মর্যাদা প্রদর্শনমূলক তাঁদের ডানা নাড়া দেন। অবশেষে যখন তাঁদের অন্তর থেকে ভয় দূর হয়ে যায় তখন ফিরিশতাগণ জিবরীলকে বলেন:আপনাদের প্রতিপালক কী বলেছেন? জিবরীল বলেন: তিনি সত্য বলেছেন। তিনি স্বকীয়ভাবে সমুন্নত ও ক্ষমতাবান। আর তিনি মহান। অন্যসব তাঁর অপেক্ষা নিচু মানের।
২৪. হে রাসূল! আপনি এসব মুশরিকদেরকে বলুন: তোমাদেরকে আসমান থেকে বারি বর্ষানোর মাধ্যমে কে জীবিকা প্রদান করেন? আর যমীন থেকে ফসলাদি, শস্য ও ফলমূল উদ্গত করার মাধ্যমে জীবিকা প্রদান করেন কে? আপনি বলুন: আল্লাহই তাথেকে তোমাদেরকে জীবিকা প্রদান করেন। আর হে মুশরিকরা! আমরা অথবা তোমরা অবশ্যই হেদায়েত কিংবা সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত রয়েছি। যে কোন পক্ষকে অবশ্যই এমনটি হতে হবে। কোন সন্দেহ নেই যে, মুমিনরা হচ্ছে হেদায়তপ্রাপ্ত, আর মুশরিকরা হচ্ছে পথভ্রষ্ট।
২৫. হে রাসূল! আপনি বলে দিন, কিয়ামতের দিন আমাদের পাপ সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে না। আর না তোমাদের পাপ সম্পর্কে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে।
২৬.আপনি তাদেরকে বলে দিন: কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তোমাদেরকে ও আমাদেরকে সমবেত করবেন। অতঃপর আমাদের ও তোমাদের মাঝে ইনসাফ সহকারে ফয়সালা করবেন। ফলে হকপন্থী আর বাতিলপন্থীর মধ্যে পার্থক্য ফুটে উঠবে। তিনিই সেই হাকিম যিনি ইনসাফ সহকারে ফয়সালা প্রদান করেন।তিনি যে বিষয়ে ফয়সালা করেন সে বিষয়ে তিনি সম্যক পরিজ্ঞাত।
২৭. হে রাসূল! তাদেরকে বলুন: তোমরা আমাকে ওই সব লোকজন দেখাও যাদেরকে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে অংশীদার বানিয়ে এবাদতে তাঁর সাথে এদেরকে শরীক করে থাক। আদৌ ব্যাপারটি এমন নয় যেমন তোমরা ধারণা করছ যে, তাঁর শরীক রয়েছে। বরং তিনি সেই আল্লাহ যাঁকে পরাভূতকারী কেউ নেই। তিনি তাঁর সৃষ্টি, ফয়সালা ও পরিচালনায় প্রজ্ঞময়।
২৮. হে রাসূল! আমি সকল মানুষের তরে আপনাকে কেবল রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি। আল্লাহভীরুদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদদাতা এবং কাফির ও পাপিষ্ঠদেরকে জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ তা জানে না। যদি তারা জানত তবে আপনাকে মিথ্যাবাদী বলত না।
২৯. মুশরিকদেরকে যে শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করা হয় তারা সেজন্য তাড়াহুড়া করে বলে: তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকলে বলো: তোমাদের অঙ্গীকারকৃত সত্য দাবিটি কোথায়?
৩০. হে রাসূল! শাস্তির জন্য এসব তাড়াহুড়োকারীদেরকে আপনি বলে দিন যে, তোমাদের জন্য নির্ধারিত মেয়াদ অবশ্যই রয়েছে। যাথেকে তোমারা সামান্যতম পিছাতে পারবে না। আর না সামান্যতম অগ্রসর হতে পারবে। আর সেটি হচ্ছে কিয়ামত দিবস।
৩১. যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করে তারা বলে: আমরা কক্ষনো এ কোরআনে বিশ্বাস করব না। যে কোরআন সম্পর্কে মুহাম্মদ বলে যে, এটি তার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর না পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনব। হে রাসূল! আপনি যদি অপরাধীদেরকে দেখতেন যখন কিয়ামত দিবসে স্বীয় প্রতিপালকের নিকট বেঁধে রাখা হবে। একে অপরের সাথে বাক-বিতÐা করবে। একজন অপরজনের উপর দয়িত্বভার ও দোষ চাপাবে। দুনিয়াতে দুর্বল অনুসারীরা তাদের উপর প্রতাপশালী নেতাদেরকে বলবে: তোমরা আমাদেরকে বিপথগামী না করলে আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের উপর বিশ্বাসী হতাম।
৩২. হকের ক্ষেত্রে অহঙ্কার প্রদর্শনকারী নেতারা তাদের ধাপটে দুর্বল অনুগামীদেরকে বলবে: আমরাকি তোমাদেরকে মুহাম্মদ কর্তৃক আনিত হেদায়েত থেকে বারণ করেছিলাম? না। বরং তোমরা ছিলে জালিম এবং ফাসিদ ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী।
৩৩. দুর্বল আনুসারীরা হক থেকে অহঙ্কার প্রদর্শনকারী নেতাদেরকে বলবে: বরং তোমরা আমাদেরকে দিন ও রাতভর প্রতারণা করে আল্লাহর সাথে কুফরি ও তাঁকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির এবাদতের নির্দেশ প্রদানের মাধ্যমে বারণ করেছ। আর দুনিয়াতে কুফরির বিনিময়ে শাস্তি প্রদর্শন ও তারা শাস্তিপ্রাপ্ত হবে একথা জানার পর তারা অপমানকে ঢেকে রাখবে। আর দুনিয়াতে আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদাত করা ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণে আমি কাফিরদের ঘাড়ে শৃঙ্খল চাপিয়ে দিব।
৩৪. আর আমি যে জনপদেই অল্লাহর শাস্তি থেকে ভীতি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নবী প্রেরণ করেছি সেখানকার পদধারী নেতৃস্থানীয় বিত্তবান উচ্চাভিলাষীরা বলেছে: হে রাসূলগণ তোমরা যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছ আমরা তাতে অবিশ্বাসী।
৩৫. আর এসব লোক অহঙ্কার ও দম্ভভরে বলেছে: আমরা ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততিতে অগ্রণী। আর তোমরা যে ধারণা করেছ যে, আমরা শাস্তিপ্রাপ্ত হব তা মিথ্যা। বরং আমরা না দুনিয়াতে আর না পরকালে শাস্তিপ্রাপ্ত হব।
৩৬. হে রাসূল! আপনি এসব নিয়ামতপ্রাপ্ত অহমিকাগ্রস্ত লোকদেরকে বলুন: আমার প্রতিপালক যাকে ইচ্ছা রিযিক বাড়িয়ে দেন পরীক্ষা করার জন্য যে, সে শুকরিয়া আদায় করে, না কি নাশুকরী করে। আবার যাকে ইচ্ছা তার উপর এটি সঙ্কীর্ণ করে দেন যাতে পরীক্ষা করেন, সে সন্তুষ্ট থাকে না কি অসন্তুষ্ট হয়। তবে বেশীরভাগ মানুষ জানে না যে, তিনি প্রজ্ঞাবান। কোন বিষয়ে পূর্ণ হিকমত ব্যতীত ফয়সালা করেন না। হ্যাঁ, যে জানার সে জেনেছে। আর যে না জানার সে জানতে পারে নি।
৩৭. আর তোমরা যে ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি নিয়ে গৌরব করছ তা তোমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি পর্যন্ত পৌঁছাবে না। বরং যে আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে কেবল সেই বহুগুণে বর্দ্ধিত প্রতিদান লাভে ধন্য হয়েছে। হ্যাঁ, আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় আর সন্তানদের দো‘আতাকে নৈকট্য লাভ করিয়ে দেয়। এসব পুণ্যবান মুমিনদের জন্য তাদের আমলের বিনিময়ে বর্দ্ধিত প্রতিদান রয়েছে। তারা শাস্তির ভয় ও পুরস্কার বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কামুক্ত অবস্থায় জান্নাতের উচ্চাসনে নিরাপদে থাকবে।
৩৮. আর যে সব কাফির মানুষকে আমার আয়াতসমূহ থেকে বারণ করা ও তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজে প্রাণান্তকর চেষ্টা চালায় তারা দুনিয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত এবং পরাকালে শাস্তিপ্রাপ্ত।
৩৯. হে রাসূল! আপনি বলুন: আমার প্রতিপালক যাকে ইচ্ছা তার জন্য রিযিক বাড়িয়ে দেন। আর যাকে ইচ্ছা রিযিক কমিয়ে দেন। আর তোমরা যা আল্লাহর পথে ব্যয় করো তিনি তদাপেক্ষা ভাল দ্বারা তার প্রতিদান দেন।আর পরকালে রয়েছে বড় পুরস্কার। বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা। ফলে যে ব্যক্তি জীবিকা চায় সে যেন তাঁর নিকট তা কামনা করে।
৪০. হে নবী! সেই দিনের কথা স্মরণ করুন যেদিন আল্লাহ সবাইকে সমবেত করে মুশরিকদেরকে নিন্দা জ্ঞাপন ও ভিতি প্রদর্শনপূর্বক ফিরিশতাদেরকে বলবেন: এরাই কী দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর পরিবর্তে তোমাদের ইবাদাত করতো?
৪১. ফিরিশতাগণ বলবেন: আপনি পবিত্র ও সম্মানী। আপনি আমাদের অভিভাবক; তারা কিছুই নয়। তাদের ও আমাদের মাঝে কোন বন্ধুত্ব নেই। বরং এরা শয়তানদের দাসত্ব করত। যারা তাদের সামনে ফিরিশতার রূপ ধারণ করে প্রকাশ পেত। আর এদের বেশীর ভাগই তাদের উপর বিশ্বাসী ছিল।
৪২. হাশর ও হিসাবের দিন দুনিয়াতে আল্লাহর পরিবর্তে ইবাদাতকৃতরা ইবাদাতকারীদের কোন উপকারে আসবে না। আর না কোন অপকার করতে পারবে। যারা অন্যায় ও পাপের মাধ্যমে নিজেদের উপর জুলুম করেছে আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলবো: তোমরাওই শাস্তি ভোগ করো দুনিয়ার জীবনে তোমরা যা অবিশ্বাস করতে।
৪৩. আর আপনি যখন এসব অস্বীকারকারী মুশরিকদের সামনে আমার জড়তাহীন সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করেন তারা তখন বলে: এই ব্যক্তি যা নিয়ে এসেছে এদ্বারা সে কেবলই তোমাদের বাপ-দাদার আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। তারা আরো বলে: এই কোরআন মিথ্যা ও তাঁর বানোয়াট বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস করেছে তারা কুরআন সম্পর্কে বলেছে:এটি পুরুষ ও মহিলা এবং পিতা ও পুত্রের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য নির্ঘাত ও সুস্পষ্ট যাদু ।
৪৪. আর আমি তাদেরকে এমন কোন কিতাব প্রদান করিনি যা তাদেরকে বাতলে দিবে যে, এই কোরআন মুহাম্মদ নিজে মিথ্যা বানিয়েছে। হে রাসূল! আমি আপনার পূর্বে তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে সতর্ক করার জন্য কোন রাসূল প্রেরণ করি নি।
৪৫. আপনার পূর্বের জাতিরা অবিশ্বাস করেছে যথা আদ, সামূদ ও লুত্ব সম্প্রদায়। আর আপনার সম্প্রদায়। তাদের শক্তি, প্রতাপ ও সম্পদ সংখ্যায় এক দশমাংশও নয় তদুপরি তাদের সম্পদ, ক্ষমতা ও সংখ্যা কোন উপকারে আসেনি। আমার শাস্তি তাদের উপর পতিত হয়েছে। অতএব, হে রসূল! আপনি দেখুন, কীভাবে তাদের উপর আমার অসন্তুষ্টি ও শাস্তি পতিত হয়েছে।
৪৬. হে রাসূল! এসব মুশরিকদেরকে বলে দিন, আমি তোমাদেরকে কেবল একটি বস্তুর প্রতি ইঙ্গিত ও তার উপদেশ প্রদান করছি যা হচ্ছে এই যে, তোমরা প্রবৃত্তিমুক্ত হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুজন ও একজন করে দÐায়মান হবে। অতঃপর তোমাদের নবীর জীবন চরিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে। আর তাঁর বিবেক, সততা ও আমানত সম্পর্কে যা জানতে পেরেছো তাও দেখবে যাতে প্রমাণিত হবে যে, সে পাগল নয়। বরং সে কেবল তোমাদেরকে কঠিন শাস্তি থেকে সতর্ককারী। যদি তোমরা আল্লাহর শিরক করা থেকে তাওবা না করো।
৪৭. হে রাসূল! এসব মুশরিকদেরকে বলে দিন। আমি তোমাদের নিকট যে হেদায়ত ও কল্যাণ নিয়ে আগমন করেছি তার বিনিময়ে কোন পারিতোষিক ও বদলা চাইনি। (যদি কিছু হয়ে থাকে) তবে তা তোমাদের জন্য। আমার প্রতিদান তো কেবল আল্লাহর নিকট। তিনি মহিয়ান; সর্ব বিষয়ে সাক্ষী। তিনি সাক্ষী রয়েছেন যে, আমি তোমাদের নিকট পৌঁছে দিয়েছি এবং তিনি তোমাদের পূর্ণ প্রতিদান দিবেন।
৪৮. হে রাসূল! আপনি বলে দিন। অবশ্যই আমার প্রতিপালক হককে বাতিলের উপর বিজয়ী করার মাধ্যমে তাকে নস্যাত করেন। আর তিনি মহান গায়েবজান্তা। তাঁর নিকট আসমান-যমীনের কোন কিছু না অজানা থাকে। না স্বীয় বান্দাদের কোন আমল লুক্কায়িত থাকে।
৪৯. হে রাসূল! এসব অস্বীকারকারী মুশরিকদেরকে বলে দিন: ইসলাম নামক সত্য এসেছে। আর অচল, দুর্বল ও প্রভাবহীন বাত্বিল দূরীভূত হয়েছে।
৫০. হে রাসূল! এসব অস্বীকারকারী মুশরিকদেরকে বলে দিন: আমি যদি তোমাদেরকে যে বার্তা শুনাচ্ছি তাতে বিপথগামী হয়ে থাকি তবে তার ক্ষয়-ক্ষতি কেবল আমারই হবে; তোমাদের নয়। পক্ষান্তরে আমি যদি সৎপথের সন্ধান পেয়ে থাকি তবে তা আমার মহান প্রতিপালকের ঐশী বাণীর মাধ্যমেই হয়েছে। তিনি স্বীয় বান্দাদের কথা শ্রবণকারী, নিকটবর্তী। আমার কথা শুনতে তাঁর কোন কষ্ট হয় না।
৫১. হে রাসূল! আপনি যদি দেখতেন এসব অস্বীকারকারীকে যারা কিয়ামত দিবসের শাস্তি দেখে ভীত হয়ে পড়বে। তাদের পালানোর কোন সুযোগ থাকবে না। আর না আশ্রয় গ্রহণের কোন সুযোগ থাকবে। তাদেরকে প্রথম ধাপেই সহজভাবে নিকটবর্তী স্থান থেকে পাকড়াও করা হবে। যদি আপনি তা দেখতেন তবে অবশ্যই এক বিষ্ময়কর বিষয় দেখতেন।
৫২. তারা যখন তাদের পরিণতি দেখবে তখন বলবে: আমরা কিয়ামত দিবসের উপর ঈমান আনলাম। অথচ ঈমান গ্রহণোপযোগী দুনিয়া যা আমলের জন্য নির্ধারিত ছিল তাথেকে বের হয়ে যাওয়ার পর পরকালে যেখানে শুধু প্রতিদানই দেওয়া হবে তাথেকে কীভাবে আমল গ্রহণ করা হবে?!
৫৩. আর কীভাবেই বা তাদের থেকে ঈমান আসতে ও স্বীকৃত হতে পারে যেখানে তারা পার্থিব জীবনে একে অস্বীকার করেছে। আর সত্য পর্যন্ত উপনীত হওয়া থেকে বহু দূরে থেকে নিছক ধারণার ঢিল ছুঁড়ে মারে। ফলে রাসূল সম্পর্কে বলে: তিনি যাদুকর, জ্যোতিষী ও কবি।
৫৪. আর এসব অস্বীকারকারী ও তারা যা কামনা করে যথা দুনিয়ার চাকচিক্য, কুফরি থেকে তাওবা, জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও দুনিয়ার জীবনে ফেরত আসা এগুলোর মাঝে পর্দা দেয়া হবে যেমনটি করা হয়েছিল পূর্ববর্তী অস্বীকারকারী জাতিদের সাথে। তারা রাসূলগণ যে সব বিশ্বাস নিয়ে এসেছিলেন যথা আল্লাহর একত্ববাদ ও পুনরুত্থান তাতে এমন সন্দিহান ছিল যা ছিল কুফরির প্রতি উদ্বুদ্ধকারী।
Icon