ﰡ
১. ত্বা-সীন। সূরা বাকারাহর শুরুতে এ জাতীয় অক্ষর সমষ্টির ব্যাপারে কথা হয়ে গেছে। বস্তুতঃ আপনার উপর নাযিলকৃত এ আয়াতসমূহ কুর‘আনেরই আয়াত এবং এমন সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত যাতে কোন ধরনের সন্দেহ নেই। যে ব্যক্তি তা নিয়ে চিন্তা করে দেখেছে সে অবশ্যই এ কথা বুঝতে পেরেছে যে, নিশ্চয়ই এ কুর‘আন আল্লাহরই পক্ষ থেকে।
২. এ আয়াতগুলো সত্যের পথপ্রদর্শক ও তার প্রতি ইঙ্গিত বহনকারী। উপরন্তু তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলদের প্রতি ঈমান আনয়নকারীদের জন্য সুসংবাদ দানকারীও বটে।
৩. যারা পরিপূর্ণরূপে সালাত আদায় করে এবং সঠিক পন্থায় নিজেদের সম্পদসমূহের যাকাত দান করে উপরন্তু আখিরাতের সাওয়াব ও শাস্তিতে বিশ্বাস করে।
৪. নিশ্চয়ই যে কাফিররা পরকালের সাওয়াব ও শাস্তিতে বিশ্বাস করে না আমি তাদের খারাপ আমলগুলোকে তাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে থাকি। তাই তারা সে কর্মগুলো চালিয়ে যাচ্ছে। মূলতঃ তারা অস্থির। সত্য ও সঠিকের পথ তারা খুঁজে পায় না।
৫. উক্ত বৈশিষ্ট্যাবলীর অধিকারীদের জন্য রয়েছে হত্যা ও বন্দীদশা জাতীয় দুনিয়ার নিকৃষ্ট শাস্তি। উপরন্তু তারা পরকালে সবার চেয়ে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ, তারা কিয়ামতের দিন নিজেদেরকে ও নিজেদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের চিরস্থায়ী বাসিন্দা বানিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
৬. হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার উপর নাযিলকৃত এ কুর‘আন আপনাকে দেয়া হয়েছে এমন সত্তার পক্ষ থেকে যিনি সৃষ্টি, পরিচালনা ও শরীয়ত নির্ধারণে প্রাজ্ঞ ও সর্বজ্ঞানী। যাঁর নিকট তাঁর বান্দাদের সুবিধা-অসুবিধার কোন কিছুই গোপন নয়।
৭. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাঁর পরিবারকে বললেন: নিশ্চয়ই আমি খানিকটা আগুন দেখতে পেয়েছি। আমি অচিরেই তোমাদের নিকট তা প্রজ্জলনকারীর সংবাদ নিয়ে আসছি। যে আমাদেরকে পথের সন্ধান দিবে। অথবা আমি সেখান থেকে কিছু অগ্নিশিখা নিয়ে আসছি। যাতে তোমরা তা দ্বারা ঠাÐা থেকে তাপ পোহাতে পারো।
৮. যখন তিনি নিজ চোখে দেখা আগুনের নিকট পৌঁছালেন তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন: আগুন ও আগুনের পাশে থাকা ফিরিশতারা পবিত্র। সর্ব জগতের প্রতিপালক মহান ও পবিত্র সে সকল বৈশিষ্ট্য থেকে যা তাঁর সাথে মানায় না অথচ ভ্রষ্টরা তা দ্বারা তাঁকে বিশেষিত করে।
৯. আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বললেন: হে মূসা! নিশ্চয়ই আমি সেই পরাক্রমশালী আল্লাহ যাঁকে কেউ পরাজিত করতে পারে না। আমি নিজ সৃষ্টি, পরিচালনা ও শরীয়ত নির্ধারণে অত্যন্ত প্রজ্ঞাময়।
১০. আপনি নিজ লাঠিটা ফেলে দিন। অতঃপর মূসা (আলাইহিস-সালাম) তাই করলেন। যখন মূসা (আলাইহিস-সালাম) দেখলেন লাঠিটি সাপের ন্যায় অস্থিরভাবে নড়াচড়া করছে তখন তিনি পিঠ পেছনে দিয়ে পালিয়ে যেতে লাগলেন। পেছনের দিকে একটুও ফিরে তাকালেন না। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বললেন: তুমি ভয় পেয়ো না। নিশ্চয়ই আমার নিকট রাসূলগণ সাপ বা অন্য কিছু দেখে ভয় পায় না।
১১. আর যে পাপ করে নিজের উপর যুলুম করেছে অতঃপর তাওবা করেছে নিশ্চয়ই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
১২. আপনি এবার নিজ জামার গলার ফাঁকা দিয়ে নিজের হাত ঢুকান। দেখবেন সেখানে হাত ঢুকানোর পর তা বরফের মতো সাদা হয়ে বেরিয়ে আসবে। যা কোন শ্বেত রোগ নয়। যা নয়টি নিদর্শনেরই একটি যেগুলো আপনার সত্যতারই সাক্ষ্য দিবে। আর সেগুলো হলো হাতের শুভ্রতা, লাঠি, দুর্ভিক্ষ, ফলমূলের ঘাটতি, তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত। যেগুলোকে ফিরআউন ও তার সম্প্রদায়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। বস্তুতঃ তারা এমন এক জাতি যারা আল্লাহর সাথে কুফরি করে তাঁর আনুগত্য থেকে বেরিয়ে গেছে।
১৩. যখন তাদের নিকট আমার এ প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ এসে গেলো -যেগুলোর মাধ্যমে আমি মূসা (আলাইহিস-সালাম) কে শক্তিশালী করেছি- তখন তারা বললো: মূসা (আলাইহিস-সালাম) যে নিদর্শনগুলো নিয়ে এসেছে মূলতঃ সেগুলো সুস্পষ্ট যাদু মাত্র।
১৪. তারা নিজেদের যুলুম ও সত্য গ্রহণে দাম্ভিকতার দরুন এ সুস্পষ্ট নিদর্শনগুলোকে অস্বীকার করলো এবং তা কোনভাবে স্বীকারই করলো না। যদিও তাদের অন্তরাত্মা বিশ্বাস করেছে যে, নিশ্চয়ই এগুলো আল্লাহরই পক্ষ থেকে। হে রাসূল! আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন, জমিনে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কুফরি ও পাপের দরুন তাদের পরিণাম কেমন ছিলো। আমি তাদের সবাইকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি।
১৫. আমি দাউদ ও তাঁর ছেলে সুলাইমান (আলাইহিমাস-সালাম) কে বিশেষ জ্ঞান দিয়েছি। যার মাঝে রয়েছে পাখিদের ভাষার জ্ঞান। তাই দাউদ ও সুলাইমান (আলাইহিমাস-সালাম) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায়ার্থে বললেন: সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে নবুওয়াত এবং জিনশয়তানকে আমাদের অধীন করার মাধ্যমে তাঁর অনেক মু’মিন বান্দার উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
১৬. বস্তুতঃ সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) নবুওয়াত, জ্ঞান ও ক্ষমতায় তাঁর পিতা দাউদ (আলাইহিস-সালাম) এর ওয়ারিশ হয়েছেন। ফলে তিনি তাঁর ও তাঁর পিতার উপর আল্লাহর নিয়ামতের বর্ণনা দিয়ে বললেন: হে মানুষ! আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পাখির আওয়াজ বুঝার জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে এমন সব কিছু দিয়েছেন যা নবী ও রাষ্ট্রপতিদেরকে দিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা যা আমাদেরকে দিয়েছেন তা তাঁর প্রকাশ্য ও সুস্পষ্ট অনুগ্রহ।
১৭. সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) এর জন্য তাঁর সেনাবাহিনী তথা মানুষ, জিন ও পাখীদেরকে একত্রিত করা হলো। বস্তুতঃ তাদেরকে সুশৃক্সক্ষলভাবেই পরিচালনা করে আনা হয়।
১৮. এভাবেই তাদেরকে পরিচালিত করে নেয়া হচ্ছিলো। যখন তারা সিরিয়ার ওয়াদি আন-নামল তথা পিপীলিকার উপত্যকায় আসলো তখন একটি পিপীলিকা বললো: হে পিঁপড়ার দল! তোমরা নিজেদের ঘরে ঘরে প্রবেশ করো। যাতে সুলাইমান ও তাঁর সেনাবাহিনী নিজেদের অজান্তে তোমাদেরকে ধ্বংস না করে বসে। কারণ, তাঁরা তোমাদের সম্পর্কে জানলে অবশ্যই তোমাদেরকে পদপিষ্ট করবেন না।
১৯. যখন সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) পিঁপড়ার কথা শুনলেন তখন তিনি তার কথায় মুচকি হেসে নিজ প্রতিপালককে ডেকে বললেন: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে আপনার সেই নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করার তাওফীক ও মানসিকতা দিন যে নিয়ামত আপনি আমাকে ও আমার মাতা-পিতাকে দিয়েছেন। আর আপনি আমাকে আপনার সন্তুষ্টি মাফিক নেক আমল করার তাওফীক দিন। উপরন্তু আমাকে আপনার নিজ দয়ায় আপনার নেককার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
২০. একদা সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) পাখীদের খোঁজ-খবর নিলে তিনি হুদহুদকে দেখতে পাননি। তাই তিনি বললেন: কী হলো, আমি যে হুদহুদকে দেখতে পাচ্ছি না? আমার কি দেখতে কোন অসুবিধে হচ্ছে, না কি সে অনুপস্থিত?
২১. তার অনুপস্থিতির ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হলে তিনি তার সম্পর্কে বললেন: আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দেবো, না হয় তাকে অনুপস্থিতির শাস্তি স্বরূপ জবাই করে দেবো, না হয় সে আমার নিকট এমন একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ আনবে যা তার অনুপস্থিতির ওজর প্রকাশ করবে।
২২. হুদহুদের অনুপস্থিতির সময়টুকু খুব একটা বেশি হলো না ইতিমধ্যে সে উপস্থিত হয়ে সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) কে বললো: আমি এমন কিছু জানতে পেরেছি যা আপনি জানতে পারেননি। আমি আপনার নিকট সাবাবাসীদের পক্ষ থেকে একটি নিশ্চিত সত্য খবর নিয়ে আসলাম।
২৩. আমি এমন একজন নারীকে পেলাম যে তাদের উপর রাজত্ব করছে এবং সে নারীকে শক্তি ও ক্ষমতার সকল উপায়-উপাদান দেয়া হয়েছে। উপরন্তু তার নিকট একটি বিরাট সিংহাসন রয়েছে যার উপর থেকে সে নিজ জাতির সমূহ কর্মকাÐ পরিচালনা করে।
২৪. আমি এ নারী ও তার সম্প্রদায়কে আল্লাহ ব্যতিরেকে সূর্যের জন্য সাজদাহ করা অবস্থায় পেয়েছি। মূলতঃ শয়তান তাদের জন্য শিরক ও গুনাহর কর্মকাÐকে সুন্দর করে সাজিয়েছে। এভাবে সে তাদেরকে সত্য পথ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ফলে তারা সত্য পথপ্রাপ্ত হতে পারছে না।
২৫. শয়তান তাদের জন্য শিরক ও গুনাহর কর্মকাÐকে সুন্দর করে সাজিয়েছে। যাতে তারা এক আল্লাহর জন্য সাজদাহ না করে। যিনি আকাশের অজ্ঞাত বৃষ্টি এবং জমিনের উদ্ভিদ বের করে আনেন। উপরন্তু তিনি তোমাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব আমলই জানেন। তাঁর নিকট এগুলোর কোন কিছুই গোপন নয়।
২৬. তিনি আল্লাহ। যিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি মহান আরশের মালিক।
২৭. সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) হুদহুদকে বললেন: আমি অচিরেই দেখবো। তুমি নিজ দাবিতে সত্যবাদী না মিথ্যাবাদী।
২৮. অতঃপর সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) একটি চিঠি লিখে হুদহুদকে দিয়ে বললেন: তুমি আমার এ চিঠিটি নিয়ে সাবাবাসীদের উপর নিক্ষেপ করো তথা তাদেরকে তা হস্তান্তর করো। আর তাদের থেকে একটু সরে গিয়ে তারা এ ব্যাপারে কী বলে তা শুনো।
২৯. রাণী চিঠিটি গ্রহণ করে বললো: হে গণ্যমান্য সভাসদরা! আমার উপর একটি সম্মানজনক ও গুরুত্বপূর্ণ পত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
৩০. এ চিঠির বিষয়বস্তু হলো, এটি সুলাইমানের পক্ষ থেকে প্রেরিত যা শুরু করা হয়েছে এমন আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময় ও অত্যন্ত দয়ালু।
৩১. তোমরা অহঙ্কার না করে বরং আমি যে আল্লাহর তাওহীদ ও শিরক পরিত্যাগের দিকে ডাকছি সেদিকে অনুগত ও আত্মসমর্পণকারী বেশে চলে আসো। তোমরা তো তাঁর সাথে সূর্য পূজা করছো।
৩২. রাণী বললো: হে সম্মানীয় ও নেতৃস্থানীয়রা! তোমরা আমার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সঠিক দিকটি বর্ণনা করো। কারণ, আমি কখনো তোমাদের উপস্থিতি এবং সে ক্ষেত্রে তোমাদের মতামত ব্যক্ত করা ছাড়া কোন ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নেই না।
৩৩. তার সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তিরা তাকে বললো: আমরা মহা শক্তিধর এবং যুদ্ধক্ষেত্রে কঠিন আঘাতকারী। আর সিদ্ধান্ত নিবেন কেবল আপনিই। সুতরাং আপনি ভেবে দেখুন, আমাদেরকে কী আদেশ করবেন। আমরা নিশ্চয়ই তা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম।
৩৪. রাণী বললো: রাষ্ট্রপতিরা যখন কোন এলাকায় প্রবেশ করে তখন তারা ছিনতাই, হত্যা ও লুটের মাধ্যমে সেই জনপদকে ধ্বংস করে দেয়। এমনকি তারা সে এলাকার গণ্যমান্য ও নেতৃস্থানীয়দেরকে লাঞ্ছিত করে। অথচ তারাই ছিলো একদা সে এলাকার মর্যাদাবান ও পরাক্রমশালী। এভাবেই রাষ্ট্রপতিরা সর্বদা করে থাকে যখন তারা কোন এলাবাসীর উপর জয়ী হয়। যেন তারা ওদের অন্তরে ভয় ও ভীতির সঞ্চার করতে পারে।
৩৫. বরং আমি এ চিঠির লেখক ও তার সম্প্রদায়ের নিকট উপঢৌকন পাঠাচ্ছি। আমি দেখবো, দূতরা এ উপঢৌকন পাঠানোর পর কী সংবাদ নিয়ে আসে।
৩৬. যখন দূত ও তার সহযোগীরা উপঢৌকন নিয়ে সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট উপস্থিত হলো তখন সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) তাদের উপঢৌকন পাঠানোর কৌশলের নিন্দা করে বললেন: তোমরা কি সম্পদ দিয়ে আমাকে তোমাদেরকে পাকড়াও করা থেকে বিরত রাখতে চাও। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যে নবুওয়াত, ক্ষমতা ও সম্পদ দিয়েছেন তা তোমারেকে দেয়া সকল কিছুর চেয়ে উত্তম। বরং তোমরাই দুনিয়ার সম্পদের বিশেষ উপঢৌকন পেয়ে খুশি।
৩৭. সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) সেই নারীর দূতকে বললেন: তুমি আমার নিকট আনীত উপঢৌকন নিয়ে তাদের কাছে ফিরে যাও। আমি অবশ্যই তার নিকট ও তার সম্প্রদায়ের নিকট এমন এক সেনাবাহিনী নিয়ে উপস্থিত হবো যাদেরকে প্রতিরোধ করার কোন ক্ষমতাই তাদের নেই। উপরন্তু তারা যদি আমার নিকট অবনত মস্তিষ্কে না আসে তাহলে আমি তাদেরকে সাবা এলাকা থেকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে বের করে দেবো। সেখানে তারা দীর্ঘ দিন যাবৎ সম্মানিত ও গৌরবান্বিত ছিলো।
৩৮. সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) তাঁর বিশেষ সভাসদবৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বললেন: হে আমার সভাসদবৃন্দ! তোমাদের মধ্যকার কে তারা অবনত হয়ে এখানে আসার পূর্বেই সেই নারীর সিংহাসন আমার নিকট নিয়ে আসবে?
৩৯. এক শক্তিশালী জিন উত্তরে বললো: আপনি এ মজলিস থেকে উঠার আগেই আমি তার সিংহাসনটি আপনার নিকট নিয়ে আসবো। বস্তুতঃ আমি তা বহন করতে সক্ষম এবং তাতে যা রয়েছে সে ব্যাপারে আমানতদার। আমি সেখান থেকে কিছুই কমিয়ে দেবো না।
৪০. সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) এর কাছে ছিলো এক নেককার জ্ঞানী, যার নিকট আল্লাহর কিতাবের জ্ঞান রয়েছে, সে আল্লাহর এমন মহান নাম জানে যার মাধ্যমে তাঁকে ডাকলে তিনি উত্তর দিয়ে থাকেন। সে ব্যক্তি বললো: আমি আপনার চোখের পলক ফেরানোর আগেই আপনার নিকট তার সিংহাসন নিয়ে আসবো। আমি আল্লাহর নিকট দু‘আ করলে তিনি তা এনে দিবেন। অতঃপর সে দু‘আ করলে আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবুল করেন। যখন সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) সে নারীর সিংহাসনটি নিজের সামনে স্থির দেখতে পেলো তখন তিনি বললেন: এটি মূলতঃ আমার প্রতিপালকের দয়া। যেন তিনি আমাকে পরীক্ষা করে দেখেন, আমি তাঁর নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করি, না অকৃতজ্ঞ হই? বস্তুতঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করলো তার কৃতজ্ঞতার ফায়েদা সেই পাবে। আল্লাহ তা‘আলা অমুখাপেক্ষী; বান্দাহর কৃতজ্ঞতা তাঁর মর্যাদা কিছুই বাড়িয়ে দেয় না। আর যে আল্লাহর নিয়ামতকে অস্বীকার করে তথা সেগুলোর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না তার অকৃতজ্ঞতার ফল সে পাবে। আমার প্রতিপালক তার কৃতজ্ঞতার প্রতি অমুখাপেক্ষী এবং তিনি অত্যন্ত দানশীল। আর তাঁর দানের একটি বিশেষ দিক হলো তাঁর নিয়ামত অস্বীকারকারীদেরকেও দান করা।
৪১. সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) বললেন: তোমরা তার সিংহাসনটিকে নিজ ধরন থেকে একটু বদলে দাও। আমি দেখবো, সে কি তার সিংহাসন চিনতে পারে, না কি সে এমন লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয় যারা নিজেদের জিনিসপত্র চিনতে পারে না।
৪২. যখন সাবা এলাকার রাণী সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) এর নিকট আসলো তখন তাকে পরীক্ষামূলকভাবে বলা হলো, এটা কি তোমার সিংহাসনের মতো? তখন সে উত্তরে বললো: মনে হয় এটা তো সেটাই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে ইতিপূর্বেই জ্ঞান দান করেছেন। আর আমরা তাঁর আদেশেরই অনুসারী ও অনুগত।
৪৩. সে তার সম্প্রদায়ের অনুসারী ও অনুগত হয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর পূজা করতো। এটাই তাকে মূলতঃ আল্লাহর তাওহীদ থেকে সরিয়ে রেখেছিলো। বস্তুতঃ সে আল্লাহর সাথে কুফরিকারী সম্প্রদায়েরই অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তাই সে তাদের মতোই কাফির ছিলো।
৪৪. তাকে বলা হলো: তুমি প্রাসাদে প্রবেশ করো। যার মেঝে ছিলো সমুদ্র পৃষ্ঠের ন্যায়। যখন সে সেটিকে দেখলো তখন সে সেটিকে জলাধার ভেবে তাতে প্রবেশের জন্য নিজের পায়ের গোছাদ্বয় খুলে ফেললো। সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) তাকে বললেন: আরে, এটিতো এক স্বচ্ছ কাঁচমÐিত প্রাসাদ। অতঃপর তিনি তাকে ইসলামের দিকে ডাকলে সে তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বললো: হে আমার প্রতিপালক! নিশ্চয়ই আমি তোমার সাথে অন্য কিছুকে পূজা করে সত্যিই নিজের উপর যুলুম করেছি। তাই আমি এখন সুলাইমান (আলাইহিস-সালাম) এর সাথে সকল সৃষ্টির প্রতিপালক এক আল্লাহরই অনুগত হচ্ছি।
৪৫. আমি সামূদ সম্প্রদায়ের নিকট তাদেরই এক বংশীয় ভাই সালিহ (আলাইহিস-সালাম) কে এ মর্মে পাঠিয়েছি যে, তোমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করো। তাঁর দা’ওয়াতের পর বস্তুতঃ তারা দু’ দলে বিভক্ত হয়ে গেলো: এক দল মু’মিন। আর আরেক দল কাফির। তারা পরস্পর এ ব্যাপারে ঝগড়া করছে যে, তাদের মধ্যকার কে সত্যের উপর রয়েছে।
৪৬. সালিহ (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: তোমরা কেন রহমতের আগে দ্রæত আযাব চাচ্ছো? তোমরা কেন আল্লাহর কাছ থেকে রহমতের আশায় নিজেদের গুনাহগুলোর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছো না?
৪৭. তাঁর সম্প্রদায় সত্যের সাথে গাদ্দারি করে তাঁকে বললো: আমরা মূলতঃ তোমার ও তোমার মু’মিন সাথীদের ব্যাপারে কুলক্ষণ ভাবি। সালিহ (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: তোমরা যে বিপদের সময় পাখি উড়িয়ে কুলক্ষণ নির্ধারণ করে থাকো সেটিও আল্লাহ তা‘আলা ভালোভাবেই জানেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়। বরং তোমাদেরকে মূলতঃ কল্যাণের বিস্তৃতি ও অকল্যাণ দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
৪৮. হিজর শহরে মূলতঃ নয়জন লোক ছিলো যারা কুফরি ও গুনাহর মাধমে জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করতো। তারা ঈমান ও নেক আমলের মাধ্যমে সেটিকে সংশোধনের চেষ্টা করতো না।
৪৯. তাদের একজন অপরজনকে বললো: তোমাদের প্রত্যেকেই এ ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করুক যে, নিশ্চয়ই আমরা সবাই তার ঘরে রাতের বেলায় উপস্থিত হয়ে তাকে হত্যা করবো। অতঃপর তার রক্তের দাবিদারকে বলবো: আমরা সালিহ ও তার পরিবারের হত্যাকাÐে উপস্থিত ছিলাম না। আর আমরা যা বলছি তা সত্যিই বলছি।
৫০. বস্তুতঃ তারা সালিহ (আলাইহিস-সালাম) ও তাঁর অনুসারী মু’মিনদেরকে ধ্বংস করার জন্য গোপনে ষড়যন্ত্র করেছে। আর আমিও এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছি তাঁকে সাহায্য করা ও তাঁকে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে বাঁচানো এবং তাঁর বংশের কাফিরদেরকে ধ্বংস করার জন্য। অথচ তারা তা জানে না।
৫১. হে রাসূল! আপনি একটু চিন্তা করে দেখুন, তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের পরিণতি কেমন হয়েছিলো? আমি তাদেরকে আযাবের মাধ্যমে মূলোৎপাটন করেছি। ফলে তাদের শেষ লোকটি পর্যন্ত ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
৫২. তাদের ঘর-বাড়ির দেয়ালগুলো ছাদসমেত ধ্বসে পড়লো। তাদের যুলুমের দরুন সেগুলো অধিবাসীশূন্য হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই যুলুমের কারণে তাদের নিকট যে আযাব এসেছিলো তাতে মু’মিনদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। কারণ, তারাই তো নিদর্শনসমূহ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
৫৩. আর আমি সালিহ (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়ের মধ্যকার যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করেছে তাদেরকে রক্ষা করেছি।
৫৪. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন লূত (আলাইহিস-সালাম) এর কথা যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে সাবধান করতঃ তাদের অসৎকর্মকাÐের প্রতি নিন্দা করে বললেন: তোমরা কি প্রকাশ্যে ও পরস্পরের চোখের সামনে নিজেদের আড্ডাখানায় নিকৃষ্ট কর্ম তথা সমকামিতা করছো?!
৫৫. তোমরা কি কামোত্তেজনা নিবারণের জন্য মহিলাদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষের কাছে যাচ্ছো? তোমরা মূলতঃ সাধুতা রক্ষা ও সন্তান চাও না। বরং পশুর ন্যায় তোমাদের উত্তেজনা নিবারণই কেবল উদ্দেশ্য। মূলতঃ তোমরা এক মূর্খ ও অসভ্য জাতি। তোমরা নিজেদের কর্তব্য তথা ঈমান, পবিত্রতা ও গুনাহ থেকে দূরে থাকা সম্পর্কে কিছুই জানো না।
৫৬. তখন তাঁর সম্প্রদায়ের একটিই উত্তর ছিলো। তারা বললো: তোমরা লূতের পরিবারকে নিজেদের এলাকা থেকে বের করে দাও। কারণ, তারা এমন কিছু মানুষ যারা নাপাক ও কদর্যতা থেকে পবিত্র থাকতে চায়। তারা এ কথা বললো লূত (আলাইহিস-সালাম) এর পরিবারের সাথে ঠাট্টা করে। যারা অশ্লীল কাজে তাদের অংশীদার হতো না। বরং তা করার ব্যাপারে তারা ওদেরকে নিন্দা করতো।
৫৭. অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে রক্ষা করলাম। তবে তাঁর স্ত্রীকে নয়। কারণ, আমি তার ব্যাপারে এ ফায়সালা করেছি যে, সে আযাবের মাঝে অন্যদের সাথেই থাকবে। যাতে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
৫৮. আর আমি তাদের উপর আকাশ থেকে পাথরের বৃষ্টি বর্ষণ করেছি। যা ছিলো ধ্বংসাত্মক এক নিকৃষ্ট বৃষ্টি ওদের জন্য যাদেরকে একদা আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে। অথচ তারা তাতে সাড়া দেয়নি।
৫৯. হে রাসূল! আপনি বলুন: সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এটা তাঁর দেয়া নিয়ামতের দরুন এবং সেই আযাব থেকে নিরাপত্তা লাভের দরুন যা দ্বারা তিনি লূত সম্প্রদায়কে শাস্তি দিয়েছেন। এসবই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাহাবীদের জন্য প্রযোজ্য। সত্যিকার মা’বূদ হিসেবে আল্লাহই কি উত্তম -যাঁর হাতে সকল কিছুর মালিকানা- না ওই মাবূদগুলো মুশরিকরা যেগুলোর পূজা করে; যারা কোন উপকার কিংবা ক্ষতির মালিক নয়?!
৬০. নাকি তিনিই যিনি পূর্বের কোন নমুনা ছাড়া আকাশ ও জমিনকে সৃষ্টি করেছেন এবং হে মানুষ! তোমাদের জন্য আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি নাযিল করেছেন। অতঃপর আমি তারই মাধ্যমে তোমাদের জন্য অনেকগুলো সুন্দর ও সুষমামÐিত বাগান তৈরি করেছি। তোমরা এ বাগানগুলোর গাছ জন্মাতে পারতে না। কারণ, তোমরা তা করতে অক্ষম। বস্তুতঃ আল্লাহই তা জন্মিয়েছেন। আল্লাহর পাশাপাশি কোন মা’বূদ কি তা করতে পারে?! না, বরং তারা সত্যবিচ্যুত একটি সম্প্রদায় যারা অন্যায়ভাবে ¯্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে একাকার করতে চায়।
৬১. নাকি তিনিই যিনি জমিনকে স্থির ও স্থিতিশীল করেছেন যাতে তার উপর থাকা বসবাসকারীদেরকে নিয়ে সে নড়াচড়া না করে। যিনি তার মাঝে অনেকগুলো প্রবাহিত নদী সৃষ্টি করেছেন। এমনকি তিনি তার জন্য অনেকগুলো স্থির পাহাড়ও তৈরি করেছেন। আরো তৈরি করেছেন তিনি লবনাক্ত ও সুমিষ্ট পানির সাগরদ্বয়ের মাঝে পার্থক্যকারী আড়াল। যা লবনাক্ত পানীকে সুমিষ্ট পানির সাথে মিশতে বাধা দেয়। যাতে তা নষ্ট হয়ে পানের অনুপযুক্ত না হয়ে যায়। আল্লাহর পাশাপাশি কোন মা’বূদ কি তা করতে পারে?! না, বরং তাদের অধিকাংশই তা জানে না। যদি তারা জানতো তাহলে তারা আল্লাহর সাথে তাঁর কোন সৃষ্টিকে শরীক করতো না।
৬২. নাকি তিনিই যিনি সেই ব্যক্তির ডাকে সাড়া দেন, যার ব্যাপারটি খুবই কঠিন ও সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। যিনি মানুষের উপর পতিত রোগ, দরিদ্রতা ইত্যাদিকে দূর করেন। উপরন্তু যিনি তোমাদেরকে জমিনের প্রতিনিধি বানিয়েছেন। যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম একে অপরের স্থলাভিষিক্ত হয়। আল্লাহর পাশাপাশি কোন মা’বূদ কি তা করতে পারে?! না, বরং তোমরা খুব কমই উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করো।
৬৩. নাকি তিনিই যিনি তারকা ও নিদর্শনাবলী দাঁড় করিয়ে তোমাদেরকে সাগর ও স্থলভাগের অন্ধকারে পথ দেখান। যিনি বৃষ্টি নাযিল হওয়ার নিকটবর্তী সময়ে সুসংবাদ বহনকারী হিসেবে বাতাস প্রবাহিত করেন। যার মাধ্যমে তিনি নিজ বান্দাদেরকে দয়া করেন। আল্লাহর পাশাপাশি কোন মা’বূদ কি তা করতে পারে?! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টিকুলের সাথে তাদের শিরক করা থেকে পূত ও পবিত্র।
৬৪. নাকি তিনিই যিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে মায়ের জরায়ুতে বাচ্চা সৃষ্টির কার্যক্রম শুরু করেন। অতঃপর তিনি মৃত্যুর পর তাকে আবারো জীবিত করবেন। যিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ এবং জমিনে উদ্ভিদ জন্মানোর মাধ্যমে তোমাদেরকে রিযিক দিয়ে থাকেন! আল্লাহর পাশাপাশি কোন মা’বূদ কি তা করতে পারে?! হে রাসূল! আপনি এ মুশরিকদেরকে বলুন: তোমরা শিরকের ব্যাপারে নিজেদের প্রামাণাদি পেশ করো যদি তোমরা নিজেদের এ দাবিতে সত্যবাদী হও যে, নিশ্চয়ই তোমরা সঠিক পথের উপর রয়েছো।
৬৫. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: আকাশের কোন ফিরিশতা এবং জমিনের কোন মানুষ গায়েব জানে না। কেবল আল্লাহ তা‘আলাই তা জানেন। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আকাশ ও জমিনের কেউই জানে না কখন প্রতিদানের জন্য তাদেরকে আবারো উঠানো হবে।
৬৬. নাকি তাদের নিকট আখিরাত সম্পর্কীয় ধারাবাহিক জ্ঞান এসে গিয়েছে যা তারা বিশ্বাস করেছে? না, বরং তারা আখিরাত সম্পর্কে সন্দেহ ও অস্থিরতায় রয়েছে। বরং তাদের দূরদৃষ্টি এ ব্যাপারে অন্ধ।
৬৭. কাফিররা অস্বীকারের সূরে বললো: আমরা যখন মরে মাটি হয়ে যাবো তখন কি আমাদেরকে আবারো জীবিত করে উঠানো সম্ভব?
৬৮. আমাদের সাথে এবং ইতিপূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষদের সাথেও এ মর্মে ওয়াদা করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই আমাদের সবাইকে দ্বিতীয়বার উঠানো হবে। বস্তুতঃ আমরা এখনো এ ওয়াদার বাস্তবায়ন দেখতে পাইনি। মূলতঃ আমাদের সবাইকে যে ওয়াদা দেয়া হয়েছে তা ছিলো পূর্ববর্তীদের মিথ্যা কাহিনী। যা তারা নিজেদের বই-পুস্তকে লিপিবদ্ধ করেছে।
৬৯. হে রাসূল! আপনি এ পুনরুত্থান অস্বীকারকারীদেরকে বলুন: তোমরা জমিনের যে কোন এলাকায় ভ্রমণ করে দেখো, কেমন পরিণতি হয়েছিলো পুনরুত্থান অস্বীকারকারী অপরাধীদের। আমি তাদেরকে পুনরুত্থান অস্বীকার করার দরুন ধ্বংস করে দিয়েছি।
৭০. আপনার দা’ওয়াত থেকে মুশরিকদের মুখ ফিরিয়ে নেয়ার দরুন আপনি চিন্তিত হবেন না। তাদের ষড়যত্রের দরুন আপনার মন যেন খারাপ না হয়ে যায়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলাই আপনাকে তাদের উপর জয়ী করবেন।
৭১. আপনার সম্প্রদায়ের পুনরুত্থান অস্বীকারকারী কাফিররা বলে: কখন বাস্তবায়িত হবে আমাদেরকে তোমার ও মু’মিনদের মাধ্যমে দেয়া আযাবের ওয়াদা? যদি তোমরা নিজেদের দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো তাহলে এনে দেখাও।
৭২. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: সম্ভবতঃ তোমরা যে আযাব দ্রæত কামনা করছো তা অতি নিকটে।
৭৩. হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক মানুষের প্রতি অতি দয়াশীল। কারণ, তিনি তাদেরকে কুফরি এবং পাপ সত্তে¡ও দ্রæত শাস্তি দেন না। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর এ নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।
৭৪. নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের অন্তরের গোপন এবং প্রকাশ্য সব কিছুই জানেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই অজানা নয়। তিনি অচিরেই তাদেরকে এর প্রতিদান দিবেন।
৭৫. আকাশ এবং জমিনে মানুষের অলক্ষ্যে যা কিছু রয়েছে তা সবই সুস্পষ্ট কিতাব তথা লাওহে মাহফ‚জে রয়েছে।
৭৬. নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিলকৃত এ কুর‘আন বনী ইসরাঈলের দ্ব›দ্বপূর্ণ অধিকাংশ বিষয় বর্ণনা করে এবং তাদের বক্রতা সুস্পষ্ট করে তোলে।
৭৭. নিশ্চয়ই এটি মু’মিনদের জন্য রহমত ও হিদায়েত স্বরূপ। যারা এর বিষয়বস্তুর উপর আমল করে।
৭৮. হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যকার কাফির ও মু’মিনদের মাঝে ইনসাফের ফায়সালা করবেন। তিনি মু’মিনকে দয়া করবেন এবং কাফিরকে শাস্তি দিবেন। তিনি এমন পরাক্রমশালী যিনি তাঁর শত্রæদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন। কেউ তাঁকে পরাজিত করতে পারবে না। তিনি এমন জ্ঞানী যাঁর নিকট হক বাতিলের সাথে কখনো মিশ্রিত হয় না।
৭৯. তাই আপনি আল্লাহর উপর ভরসা করুন এবং আপনার সকল ব্যাপারে তাঁর উপর নির্ভরশীল হোন। নিশ্চয়ই আপনি সুস্পষ্ট সত্যের উপর রয়েছেন।
৮০. হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনি মৃতদেরকে কোন কিছু শুনাতে পারবেন না। যাদের অন্তরগুলো আল্লাহর সাথে কুফরি করার দরুন মরে গিয়েছে। না আপনি বধিরদেরকে নিজের ডাক শুনাতে পারবেন, যদি তারা আপনার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে চলে যেতে চায়।
৮১. যাদের অন্তর্দৃষ্টি সত্য দেখার ব্যাপারে অন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদেরকে আপনি কখনো পথের দিশা দিতে পারবেন না। তাই আপনি তাদেরকে নিয়ে চিন্তা করে নিজকে ক্লান্ত ও শ্রান্ত করবেন না। আপনার ডাক কেবল তারাই শুনবে যারা আমার নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস করে। তারাই আল্লাহর আদেশসমূহের সামনে আত্মসমর্পণকারী।
৮২. যখন তাদের কুফরি ও গুনাহের উপর অবিচল থাকার দরুন আযাব চ‚ড়ান্ত ও নির্ধারিত হয়ে যাবে এবং খারাপ লোকেরা অবশিষ্ট থাকবে তখন আমি কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে তার একটি বড় নিদর্শন পৃথিবীর ভ‚গর্ভ থেকে বের করে দেবো। তা হলো একটি বিশেষ জীব। যে তাদেরকে এ কথা বুঝিয়ে বলবে যে, নিশ্চয়ই মানুষ আমার নবীর উপর নাযিলকৃত নিদর্শনসমূহকে সত্য মনে করে নাই।
৮৩. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে দিনের কথা যেদিন আমি প্রত্যেক জাতির নেতৃস্থানীয়দের একটি দলকে একত্রিত করবো। তাদের পূর্ববর্তীদেরকে পরবর্তী প্রজন্মের সাথে একত্র করা হবে। যারা আমার নিদর্শনসমূহকে একদা মিথ্যা মনে করতো। অতঃপর তাদেরকে হিসাবের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
৮৪. তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার কাজ অব্যাহত থাকবে। এভাবে যখন তারা হিসাবের জায়গায় উপস্থিত হবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধমক দিয়ে বলবেন: তোমরা কি আমার সে আয়াতগুলোকে অস্বীকার করেছো যেগুলো আমার তাওহীদকে বুঝায় এবং আমার শরীয়তকে শামিল করে। অথচ তোমরা পুরোপুরি জানতে না যে, সেগুলো বাতিল। যার জন্য সেগুলোকে অস্বীকার করা তোমাদের জন্য সহজ হয়েছে। তোমরা এটাও জানতে না যে, সেগুলোর সাথে যে আচরণ করছো, তার দ্বারা কি সত্যায়ন করা হচ্ছে, নাকি মিথ্যারোপ করা হচ্ছে?!
৮৫. তখন তাদের যুলুম তথা আল্লাহর সাথে কুফরি ও তাঁর আয়াতসমূহকে অস্বীকার করার কারণে তাদের উপর আযাব পতিত হবে। আর তারা নিজেদের অক্ষমতা ও বাতিল প্রমাণের দরুন নিজেদেরকে বাঁচানোর জন্য কোন কথাই বলতে পারবে না।
৮৬. এ পুনরুত্থান অস্বীকারকারীরা কি দেখতে পাচ্ছে না যে, আমি রাত বানিয়েছি সেখানে তাদের ঘুমিয়ে আরাম করার জন্য। আর দিনকে আলোকিত করেছি সেখানে কোন কিছু দেখার সুবিধার জন্য। যাতে তারা নিজেদের কাজের প্রতি মনোনিবেশ করতে পারে। নিশ্চয়ই এ বারংবার মৃত্যু ও তারপর জেগে উঠার মাধ্যমে মু’মিন জাতির জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী রয়েছে।
৮৭. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে দিনের কথা যেদিন দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট ফিরিশতা দ্বিতীয়বার সিঙ্গায় ফুঁ দিবে তখন আকাশ ও জমিনের অধিবাসীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তবে আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে দয়া করে এ ভীতি থেকে বাঁচিয়ে দিবেন তাদের কথা ভিন্ন। সে দিন আল্লাহর সকল সৃষ্টি তাঁর নিকট বাধ্য ও অনুগত হয়ে আসবে।
৮৮. সেদিন আপনি পাহাড়গুলোকে দেখে মনে করবেন সেগুলো আসলেই অনড়-স্থির। অথচ সেগুলো বাস্তবে মেঘের দ্রæত গতির ন্যায় দ্রæত চলবে। এটি মূলতঃ আল্লাহর সৃষ্টি নৈপুণ্য। তিনিই সেদিন সেগুলোকে নাড়াবেন। নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে জানেন। তাঁর নিকট তোমাদের কোন আমলই গোপন নয়। তিনি অচিরেই তোমাদেরকে সেগুলোর প্রতিদান দিবেন।
৮৯. যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিবসে ঈমান ও নেক আমল নিয়ে আসবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা কিয়ামতের দিনের ভয়-ভীতি থেকে আল্লাহর নিরাপত্তায় নিরাপত্তাপ্রাপ্ত হবে।
৯০. আর যারা কুফরি ও গুনাহ নিয়ে আসবে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম। সেখানে তাদেরকে মুভের ভরে নিক্ষেপ করা হবে। আর তাদেরকে ধমক ও অবমাননা করেই বলা হবে: তোমরা দুনিয়াতে যে কুফরি ও গুনাহের কাজ করতে আজ কেবল সেগুলোরই প্রতিদান দেয়া হচ্ছে।
৯১. হে রাসূল! আপনি তাদেরকে বলে দিন: আমাকে কেবল আদেশ করা হয়েছে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ মক্কার প্রতিপালকের ইবাদাত করতে। সেখানে কোন রক্ত প্রবাহিত করা হবে না। না কারো উপর যুলুম করা হবে। না সেখানকার কোন শিকারকে হত্যা করা হবে। না সেখানকার কোন গাছ কাটা হবে। শুধু আল্লাহর জন্যই সব কিছুর মালিকানা। আমাকে আদেশ করা হয়েছে আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করতে এবং তাঁর আনুগত্যে অনুগত হতে।
৯২. আমাকে আরো আদেশ করা হয়েছে মানুষকে কুর‘আন তিলাওয়াত করে শুনাতে। যে ব্যক্তি কুর‘আনের হিদায়েতে হিদায়েতপ্রাপ্ত হবে এবং তার বিধান অনুযায়ী আমল করবে তার হিদায়েতের ফায়েদা সে নিজেই পাবে। আর যে তার বিধান থেকে সরে গিয়ে পথভ্রষ্ট হবে এবং তা অস্বীকার করবে উপরন্তু তার বিধান অনুযায়ী আমল করবে না তাকে আপনি বলুন: আমি কেবল ভীতি প্রদর্শনকারী। তাই তোমাদেরকে আল্লাহর আযাবের ভয় দেখাচ্ছি। কিন্তু তোমাদের কোন হিদায়েত আমার হাতে নেই।
৯৩. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের জন্য সকল প্রশংসা একমাত্র তাঁরই। অচিরেই আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখাবেন যা তোমাদের ভেতরে, আকাশ-জমিনে এবং রিযিকের মধ্যে অবস্থিত। ফলে তোমরা সেগুলোকে এমনভাবে চিনতে পারবে যা তোমাদেরকে সত্যের প্রতি অনুগত হওয়ার পথ দেখাবে। বস্তুতঃ আমার প্রতিপালক তোমাদের কর্মকাÐ সম্পর্কে গাফিল নন। বরং তিনি তা সবই জানেন। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়। তিনি অচিরেই তোমাদেরকে তার প্রতিদান দিবেন।