ترجمة معاني سورة الدّخان
باللغة البنغالية من كتاب الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم
.
ﰡ
১. হা-মীম, এ সব যুক্তাক্ষরের অর্থের ব্যাপারে আলোচনা সূরা বাকারার শুরুতে করা হয়েছে।
২. আল্লাহ হকের পথকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনাকারী কুরআনের নামে শপথ করলেন।
৩. আমি অতীব কল্যাণপূর্ণ কদরের রাতে কুরআন অবতীর্ণ করেছি। আমি এই কুরআন দ্বারা সতর্ককারী।
৪. উক্ত রজনীতে সকল চূড়ান্ত বিষয়াদি বন্টন করা হয়। যা রিযিক, আয়ু ইত্যাদিসহ উক্ত বছরে আল্লাহ যা কিছু সংঘটিত করবেন তার সাথে সম্পৃক্ত।
৫. আমি আমার নিকট চূড়ান্ত সকল বিষয় বন্টন করি। আমি রাসূলদের প্রেরণকারী।
৬. হে রাসূল! আমি রাসূলদেরকে আপনার রবের পক্ষ থেকে ওদের উদ্দেশ্যে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করে থাকি যাদের নিকট তাঁদেরকে প্রেরণ করি। তিনি স্বীয় বান্দাদের কথাসমূহ শ্রবণ করেন এবং তাদের কাজ ও নিয়তসমূহ সম্পর্কে জানেন। তাঁর নিকট এর কিছুই গোপন থাকে না ।
৭. তিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এতদুভয়ের সব কিছুর মালিক। তোমরা যদি দৃঢ় বিশ্বাস রাখো তবে আমার রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করো।
৮. তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্যিকার মা’বূদ নেই। যে জীবন ও মরণ দিতে পারে। তিনি ব্যতীত কোন জীবিতকারী ও মৃত্যু প্রদানকারী নেই। যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপূরুষদের প্রতিপালক।
৯. এ সব মুশরিকরা এ ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখে না বরং তারা এ ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে নিমজ্জিত। তারা ডুবে থাকা বাতিল দিয়ে এ থেকে উদাসীনতা প্রদর্শন করে থাকে।
১০. অতএব, হে রাসূল! আপনি নিজ জাতির নিকটবর্তী শাস্তির অপেক্ষা করুন। যে দিন আসমান সুস্পষ্ট ধোঁয়া নিয়ে আসবে। যা তারা কঠিন বেদনা ভরে স্বচক্ষে অবলোকন করবে।
১১. যা আপনার জাতিকে পরিবেষ্টিত করবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমাদেরকে যে শাস্তি আক্রান্ত করেছে তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
১২. ফলে তারা স্বীয় প্রতিপালকের দরবারে এই কামনা করবে, হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের থেকে প্রেরিত শাস্তি দূর করুন। আমাদের থেকে তা দূর করলে আমরা অবশ্যই আপনার উপর ঈমান আনবো।
১৩. কীভাবে তারা উপদেশ গ্রহণ করবে ও স্বীয় প্রতিপালকের প্রতি অনুরাগী হবে? অথচ তাদের নিকট রিসালাতের বর্ণনা প্রদানকারী রাসূল আগমন করেছেন এবং তারা তাঁর সত্যতা ও আমনতদারিতার কথা জানতে পেরেছে।
১৪. অতঃপর তাঁকে সত্যায়ন না করে তারা বলেছে, তিনি এমন এক শিষ্য যাকে অন্য কেউ শিক্ষা দিয়ে থাকে। তিনি রাসূল নন। তারা আরো বলে যে, তিনি একজন পাগল।
১৫. বস্তুতঃ আমি যখন তোমাদের থেকে শাস্তিকে একটুখানি ফিরিয়ে রাখি তখনই তোমরা নিজেদের কুফরী ও পাপাচারের প্রতি প্রত্যাবর্তন করো।
১৬. হে রাসূল! তাদের জন্য আপনি সে দিনের অপেক্ষা করুন যে দিন আপনার সম্প্রদায়ের কাফিরদেরকে বড় ধরনের পাকড়াও করা হবে তথা বদরের দিন। সে দিন আল্লাহকে অবিশ্বাস ও তদীয় রাসূলকে মিথ্যারাপ করার দরুন আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবো।
১৭. আমি তাদের পূর্বে ফিরআউন সম্প্রদায়কে পরীক্ষা করেছি। তাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে এক সম্মানী রাসূল আগমন করেছেন যিনি তাদেরকে আল্লাহর একত্ববাদ ও ইবাদাতের প্রতি আহŸান করেন। তিনি হলেন মূসা (আলাইহিস-সালাম)।
১৮. মূসা (আলাইহিস-সালাম) ফিরআউন ও তার জাতিকে বললেন, তোমরা আমার জন্য বনী ইসরাইলকে ছেড়ে দাও। তারা মূলতঃ আল্লাহর বান্দা। তাদেরকে তোমাদের দাসে পরিণত করা তোমাদের জন্য আদৗ উচিৎ নয়। আমি তোমাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। তিনি আমাকে যে বিষয়ে তোমাদেরকে দা’ওয়াত দিতে নির্দেশ করেছেন সে ব্যাপারে আমি বিশ্বস্ত। তা থেকে আমি কোন কিছুই হ্রাসও করবো না; বৃদ্ধিও করবো না।
১৯. তোমরা আল্লাহর ইবাদাত পরিহার করে এবং তাঁর বান্দাদের উপর বড়ত্ব প্রদর্শন করার মাধ্যমে অহঙ্কার করো না। আমি তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসব।
২০. আমি তোমাদের পাথরের আঘাত জনিত মৃত্যু থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে আমার ও তোমাদের রবের নিকট আশ্রয় নিয়েছি।
২১. আমার আনিত বিষয় সত্য বলে মেনে নিতে না চাইলে তোমরা আমার থেকে দূরে অবস্থান করো এবং আমাকে কোনরূপ অনিষ্ট দ্বারা স্পর্শ করো না।
২২. তখন মূসা (আলাহিস-সালাম) স্বীয় রবকে এই বলে দু‘আ করলেন যে, ফিরআউন ও তার জাতি হলো এমন অপরাধী যারা তড়িৎ শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত।
২৩. আল্লাহ মূসা (আলাহিস-সালাম) কে নির্দেশ দিলেন যেন তিনি নিজ জাতিকে নিয়ে রাতে ভ্রমণ করে। তিনি তাঁকে আরো জানিয়ে দিলেন যে, ফিরআউন ও তার জাতি তাঁদের পেছনে ছুটবে।
২৪. তিনি তাঁকে নির্দেশ দিলেন যে, যখন তিনি ও তাঁর জাতি পার হয়ে যাবেন তখন যেন সাগরটিকে শান্ত অবস্থায় রেখে দেন। অবশ্যই ফিরআউন ও তার জাতি সাগরে ডুবে মরবে।
২৫. ফিরাউন ও তার জাতি কতো বাগান আর ঝর্না রেখে গিয়েছে!
২৬. আর কতোই না খামার ও সুন্দরতম বৈঠক খানা রেখে গিয়েছে!
২৭. আর কতোই না আরাম-আয়েশের ভোগসামগ্রী রেখে গেছে!
২৮. বস্তুতঃ তোমাদেরকে যেভাবে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে তাই ঘটে। আর আমি তাদের বাগান, ঝর্নাধারা, ক্ষেত-খামার ও আসনগুলোকে অন্য জাতির উত্তরাধিকারে পরিণত করেছি। যারা ছিলো বনী ইসরাইল।
২৯. ফলে ফিরআউন ও তার জাতি ডুবার সময় তাদের জন্য আসমান ও যমীনবাসীর কেউ কাঁদে নি। আর না তারা তাওবার সুযোগ পেয়েছিলো।
৩০. বস্তুতঃ আমি বনী ইসরাইলকে অপমানকর শাস্তি থেকে মুক্তি দিয়েছি। যখন ফিরআউন তাদের ছেলে-সন্তানদেরকে হত্যা করতো এবং কন্যা-সন্তানদেরকে জীবিত রাখতো।
৩১. আমি তাদেরকে ফিরআউনের শাস্তি থেকে নিস্কৃতি দিয়েছি। সে ছিলো অহঙ্কারী, আল্লাহর নির্দেশ ও তাঁর দ্বীনকে লঙ্ঘনকারী।
৩২. আমি বনী ইসরাইলকে আমার জ্ঞানগোচরে অধিকহারে নবীদের মাধ্যমে সমসাময়িক সকলের উপর প্রাধান্য দিয়েছি।
৩৩. তাদেরকে এমন সব দলীল-প্রমাণাদি দিয়েছি যদ্বারা আমি মূসা (আলাহিস-সালাম) কে সহযোগিতা করেছি। যাতে তাদের জন্য মান্না-সালওয়ার মতো স্পষ্ট নি‘আমত রয়েছে।
৩৪. এ সব মিথ্যারোপকারী মুশরিক পুনরুত্থানকে অবিশ্বাস করতে গিয়ে বলে:
৩৫. এতো কেবল আমাদের একটাই মৃত্যু। এরপর আর কোন জীবন নেই। আর না আমরা এই মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হবো।
৩৬. তবে হে মুহাম্মদ! আপনি তোমার সাথীদেরসহ আমাদের মৃত পূর্বসূরীদেরকে জীবিত অবস্থায় নিয়ে আসো। যদি তোমরা নিজেদের উক্ত দাবিতে সত্যবাদী হয়ে থাকো যে, আল্লাহ মৃতদেরকে হিসাব ও প্রতিদানের উদ্দেশ্যে পুনরুত্থিত করবেন।
৩৭. হে রাসূল! আপনার প্রতি মিথ্যারোপকারী এ সব মুশরিক কি ক্ষমতা ও প্রতিরক্ষায় ভালো, না কি তুব্বা ও তাদের পূর্ববর্তী আদ ও সামূদ জাতি। যাদের সবাইকে আমি ধ্বংস করেছি। তারা ছিলো সত্যিই অপরাধী।
৩৮. আমি আসমান, যমীন ও এতদুভয়ের মধ্যবর্তী বস্তুসামগ্রীকে খেল-তামাশা স্বরূপ সৃষ্টি করি নি।
৩৯. বরং আমি আসমান ও যমীনকে এক মহৎ তাৎপর্যকে সামনে রেখে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষ তা বুঝতে অক্ষম।
৪০. নিশ্চয়ই কিয়ামত দিবস যাতে আল্লাহ বান্দাদের মধ্যে বিচার ফায়সালা করবেন তা সকল সৃষ্টির জন্য এক নির্ধারিত দিবস। সে দিন আল্লাহ সবাইকে সমবেত করবেন।
৪১. সে দিন নিকটতম ব্যক্তি তার নিকটতমজনের উপকার করতে পারবে না। আর না কোন বন্ধু তার বন্ধুর উপকার করতে পারবে। তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকেও মুক্ত করতে পারবে না। কেননা, সে দিনের রাজত্ব কেবল আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। কেউ তা দাবি করতে পারবে না।
৪২. কেবল মানুষের মধ্যে যাকে আল্লাহ দয়া করবেন। কেননা, সে পূর্বে প্রেরিত নেক আমল দ্বাারা উপকৃত হবে। আল্লাহ সেই পরাক্রমশালী যাঁকে কেউ পরাস্ত করতে পারে না। তিনি তাঁর সৃষ্টি, নির্ধারণ ও পরিচালনায় প্রজ্ঞাবান।
৪৩. যে যাক্কুম বৃক্ষ আল্লাহ জাহান্নামের গভীরে উদ্গত করেছেন।
৪৪. এটি মহাপাপীর খাদ্য। আর সে হলো কাফির যে এর অভোগ্য ফল ভক্ষণ করবে।
৪৫. উক্ত ফল হলো কালো তেল তথা আলকাতরার মতো। যা প্রচÐ গরমের তাপে তাদের পেটে উৎলাতে থাকবে।
৪৬. চূড়ান্ত পর্যায়ের গরম পানির উৎলানোর মতো।
৪৭. জানান্নামের প্রহরীকে বলা হবে, তোমরা একে ধরো এবং কঠোর ও নির্দয়ভাবে তাকে জাহান্নামের মধ্যভাগে নিক্ষেপ করো।
৪৮. অতঃপর উক্ত শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির মাথার উপর গরম পানি ঢেলে দাও। যাতে তার থেকে শাস্তি দূর না হয়।
৪৯. আর তাকে ঠাট্টার ছলে বলা হবে, এই স্বাদ আস্বাদন করো। কেননা, তুমি এমন পরাক্রমশালী যার সম্মান ক্ষুন্ন করা হয় না এবং তুমি আপন জাতির নিকট এক মহা মর্যাদাবান ব্যক্তি।
৫০. এটা সেই শাস্তি যা সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে তোমরা সন্দিহান ছিলে। অথচ প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে তা দূর হয়ে গেলো।
৫১. অবশ্যই আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মান্য করার মাধ্যমে তাকওয়া অবলম্বনকারীরা তাদের বসবাস করার স্থানে সর্ব প্রকার কষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে।
৫২. উদ্যান ও বহমান ঝর্না ধারার মাঝে।
৫৩. তারা জান্নাতে চিকন ও মোটা প্রকৃতির রেশমী কাপড় পরিধান করবে। একে অপরের সম্মুখ পানে তাকাবে। কেউ কারো পেছন দেখবে না।
৫৪. তাদেরকে যেমনিভাবে উল্লেখিত পুরস্কার দ্বারা সম্মাননা প্রদান করবো ঠিক তদ্রƒপ তাদেরকে সুন্দরী এমন নারীদের সাথে বিয়েও করাবো যারা হবে পদ্মলোচন চোখের অধিকারিণী।
৫৫. তারা তথায় তাদের সেবকদেরকে ডেকে তাদের পছন্দের ফল আনাবে। যেগুলো না ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। আর না তাতে কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে।
৫৬. তারা তথায় চিরস্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকবে। সেখানে তারা কখনো মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে না। কেবল সেটি ব্যতীত যা দুনিয়ার জীবনে প্রথমবার আস্বাদন করেছিলো। আর তাদের প্রতিপালক তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করবেন।
৫৭. উপরোক্ত নিয়ামত তথা তাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রদান ও জান্নাতে প্রবিষ্ট করা এটি আপনার রবের পক্ষ থেকে তাদের জন্য দয়া ও অনুগ্রহস্বরূপ। বস্তুতঃ এটিই সেই সফলতা যার সাথে কোন সফলতার তুলনা হয় না।
৫৮. হে রাসূল! আমি এই কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করার মাধ্যমে সহজ ও সরল করেছি। যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।
৫৯. অতএব, আপনি নিজ বিজয় ও তাদের ধ্বংসের অপেক্ষা করুন। তারা কিন্তু আপনার ধ্বংসের অপেক্ষায় রয়েছে।