ترجمة سورة الحجر

الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم
ترجمة معاني سورة الحجر باللغة البنغالية من كتاب الترجمة البنغالية للمختصر في تفسير القرآن الكريم .

১. আলিফ-লাম-রা। সূরা বাকারার শুরুতে এ জাতীয় বিক্ষিপ্ত বর্ণাবলীর ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এ মর্যাদাপূর্ণ আয়াতগুলো যেগুলো এ কথা প্রমাণ করে যে, সেগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকেই নাযিলকৃত। মূলতঃ সেগুলো এমন কুর‘আনের আয়াত যা তাওহীদ ও শরীয়তকেই সুস্পষ্ট করে।
২. কিয়ামতের দিন যখন ব্যাপারটি সুস্পষ্ট হয়ে যাবে এবং দুনিয়ার জীবনের কুফরির অসারতা প্রকাশ পাবে তখন কাফিররা সহসাই মুসলমান হওয়ার আশা পোষণ করবে।
৩. হে রাসূল! আপনি এ মিথ্যারোপকারীদেরকে ছেড়ে দিন। তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় খানাপিনা করুক এবং দুনিয়ার বিবর্ণ মজা উপভোগ করুক। উপরন্তু দীর্ঘ আশা তাদেরকে ঈমান ও নেক আমল থেকে ভুলিয়ে রাখুক। কারণ, তাদেরকে যখন কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে উপস্থিত করা হবে তখন তারা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ততার ব্যাপারটি সহজেই বুঝতে পারবে।
৪. আমি যে কোন অত্যাচারীর এলাকায় ধ্বংস নাযিল করিনা কেন তার একটি নির্দষ্ট সময় থাকে। যার কোন আগ-পিছ হয় না।
৫. সময়ের আগে কোন জাতির উপর ধ্বংস নেমে আসে না। আর সময় আসলে ধ্বংস নাযিল হতে দেরি হয় না। তাই আল্লাহর পক্ষ থেকে সুযোগ পেয়ে যালিমরা যেন ধোঁকায় না পড়ে।
৬. মক্কার কাফিররা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বললো: হে কুর‘আন প্রাপ্তির দাবিদার নিশ্চয়ই তুমি এ দাবির মাধ্যমে পাগল হিসেবেই প্রমাণিত। তুমি এর মাধ্যমে পাগলদের মতোই আচরণ করছো।
৭. তুমি কেন আমাদের নিকট সাক্ষীস্বরূপ ফিরিশতাদেরকে নিয়ে আসলে না কিংবা কুফরির দরুন আমাদের ধ্বংস কামনা করলে না।
৮. আল্লাহ তা‘আলা তাদের ফিরিশতা আসার প্রস্তাবের উত্তরে বললেন: যখন শাস্তি দিয়ে তোমাদেরকে ধ্বংস করা হিকমতপূর্ণ মনে হবে তখনই আমি ফিরিশতা নাযিল করবো। তবে যখন আমি ফিরিশতা নিয়ে আসবো এবং তারা ঈমান না আনবে তখন কিন্তু তাদেরকে কোন সময় দেয়া হবে না। বরং তাদেরকে অচিরেই কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
৯. আমি নিজেই মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হৃদয়ের উপর এ কুর‘আন নাযিল করেছি এবং আমিই এ কুর‘আনকে কম-বেশি করা এবং পরিবর্তন ও বিকৃতি থেকে রক্ষা করবো।
১০. হে রাসূল! আমি আপনার আগে বহু রাসূলকে পূর্বের কাফির গোষ্ঠীর নিকট পাঠিয়েছি। অতঃপর তারা তাঁদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে। তাই উম্মতের মিথ্যারোপের ক্ষেত্রে আপনি অভিনব কোন রাসূল নন।
১১. পূর্বের কাফির গোষ্ঠীর নিকট যে রাসূলই এসেছেন তারা তাঁকে মিথ্যুক বলেছে ও তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা করেছে।
১২. যেমনিভাবে আমি সে জাতিগুলোর অন্তরে মিথ্যারোপ ঢুকিয়ে দিয়েছি তেমনিভাবে আমি মক্কার মুশরিকদের অন্তরেও বিমুখতা এবং গাদ্দারি ঢুকিয়ে দিয়েছি।
১৩. তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর নাযিলকৃত এ কুর‘আনের প্রতি ঈমান আনবে না। তবে রাসূলগণ আনীত বিধানের প্রতি মিথ্যারোপকারীদের ধ্বংসের ব্যাপারে আল্লাহর নীতি চলমান। তাই আপনার প্রতি মিথ্যারোপকারীদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
১৪. এ মিথ্যারোপকারীরা সত্যিই হঠকারী যদিও সত্য তাদের সামনে সুস্পষ্ট প্রমাণাদির মাধ্যমে উদ্ভাসিত হয়। এমনকি আমি যদি তাদের জন্য আকাশের দরজাও খুলে দেই এবং তারা তাতে উঠতে থাকে তবুও।
১৫. তারপরও তারা সেটিকে সত্য বলে মেনে নিবে না। বরং তারা বলবে: আমাদের চোখগুলোকে সঠিক বস্তু দেখতে দেয়া হয়নি। আমরা যা দেখছি সেটি যাদুর প্রভাব মাত্র। সত্যিই আমরা যাদুগ্রস্ত।
১৬. আমি আকাশে বড় বড় তারকা বানিয়েছি যেগুলোর মাধ্যমে মানুষ সফররত অবস্থায় জল ও স্থলভাগের অন্ধকারে সঠিক পথের দিশা পায়। তেমনিভাবে আমি সেগুলোকে দর্শক ও অবলোকনকারীদের জন্য সৌন্দর্যমÐিত করেছি। যেন তারা এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর শক্তিমত্তা বুঝতে পারে।
১৭. উপরন্তু আমি আকাশকে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত সকল শয়তান থেকে নিরাপদ করেছি।
১৮. তবে যে শয়তান চুরি করে ফিরিশতাদের কথা শুনে তাকে একটি আলোকিত বস্তু পিছু নিয়ে জ্বালিয়ে দেয়।
১৯. আমি মানুষের অবস্থানের জন্য জমিনকে বিস্তৃত করেছি। আর তাতে বড় বড় পাহাড় স্থাপন করেছি। যাতে মানুষসহ জমিন হেলে না যায়। উপরন্তু আমি তাতে রকমারি উদ্ভিদ তৈরি করেছি। যা কৌশলগতভাবে নির্ধারিত ও নিরূপিত।
২০. হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে জমিনে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হরেক রকমের খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা করেছি যতোদিন তোমরা দুনিয়ার জীবনে বেঁচে থাকো। তেমনিভাবে তোমরা যাদেরকে রিযিক দিচ্ছো না সে মানুষ ও পশুর জীবন ধারণেরও ব্যবস্থা করেছি।
২১. যা কিছু দিয়ে মানুষ ও পশু লাভবান হয় আমি তা সবই সৃষ্টি করতে ও মানুষকে তা দিয়ে লাভবান করতে সক্ষম। তবে আমি নিজ প্রজ্ঞা ও ইচ্ছা অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাপ ও পরিমাণেই তা সৃষ্টি করে থাকি।
২২. আর আমি বাতাস পাঠিয়ে মেঘে বৃষ্টি সঞ্চার করি। অতঃপর সেই সঞ্চারিত মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি। আর সেই বৃষ্টির পানি থেকে তোমাদেরকে পান করাই। হে মানুষ! তোমরা এ পানিকে কুয়া ও নদী আকারে সংরক্ষিত করতে পারতে না। আল্লাহই এগুলোর মাধ্যমে পানি সংরক্ষণ করেছেন।
২৩. আমিই শূন্য থেকে সৃষ্টি করে এবং মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ঘটিয়ে মৃতকে জীবিত করি। আবার জীবিতকে মৃত্যু দিয়ে থাকি। পরিশেষে আমিই এ জমিন ও জমিনের অধিবাসীর মালিক হই।
২৪. আমি তোমাদের মধ্যকার যারা জন্ম ও মৃত্যুর মাধ্যমে গত হয়েছে তাদেরকেও জানি এবং যারা সামনে আসবে তাদেরকেও জানি। এগুলোর কোনটিই আমার নিকট গোপন নয়।
২৫. হে রাসূল! আপনার প্রতিপালক কিয়ামতের দিন সবাইকে একত্রিত করবেন। যাতে নেককারকে নেকের এবং বদকারকে বদের প্রতিদান দিতে পারেন। নিশ্চয়ই তিনি তাঁর পরিকল্পনায় প্রজ্ঞাময়, সবজান্তা। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন নয়।
২৬. নিশ্চয়ই আমি আদমকে শুকনো কাদামাটি থেকে তৈরি করেছি। যাকে বাজালে তা বাজে। যে মাটি থেকে তাঁকে তৈরি করা হয়েছে তা দীর্ঘ অবস্থানের দরুন কালো ও দুর্গন্ধময় হয়ে গিয়েছিলো।
২৭. আর আমি জিনদের বাবাকে আদম (আলাইহিস-সালাম) কে সৃষ্টির পূর্বেই কঠিন উত্তপ্ত আগুন থেকে সৃষ্টি করেছি।
২৮. হে রাসূল! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক ফিরিশতা ও তাদের সাথে থাকা ইবলিসকে বললেন: আমি অচিরেই কালো দুর্গন্ধময় ঠনঠনে শুকনো কাদামাটি থেকে মানুষ সৃষ্টি করবো।
২৯. যখন আমি তার অবয়বকে ঠিক করে তাকে পরিপূর্ণরূপে তৈরি করে ফেলবো তখন তোমরা আমার আদেশ মেনে তার সম্মানার্থে তাকে সাজদাহ করবে।
৩০. ফিরিশতারা সবাই তাদের প্রতিপালকের আদেশ অনুযায়ী তাকে সাজদাহ করলো।
৩১. তবে ফিরিশতাদের সাথে থাকা ইবলিস তাদের সাথে আদমকে সাজদাহ করতে অস্বীকৃতি জানালো। বস্তুতঃ সে তাদের কেউই নয়।
৩২. আদমকে সাজদাহ করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর আল্লাহ তা‘আলা ইবলিসকে বললেন: আমার আদেশ মেনে সাজদাহকারী ফিরিশতাদের সাথে সাজদাহ করতে তোমাকে কে বাধা দিলো বা আদেশ অমান্য করার এ কাজ করতে তোমাকে কে উৎসাহিত করলো?
৩৩. ইবলিস অহঙ্কার করে বললো: আমার জন্য ঠিক নয় এমন এক মানুষকে সাজদাহ করা যাকে আপনি কালো, শুকনো ও পচা কাদামাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন।
৩৪. আল্লাহ তা‘আলা ইবলিসকে বললেন: তুমি জান্নাত থেকে বেরিয়ে যাও। কারণ, তুমি আমার রহমত থেকে বিতাড়িত।
৩৫. আর তোমার উপর কিয়ামত পর্যন্ত অভিশাপ ও আমার রহমত থেকে বিতাড়িত হওয়া অবধারিত থাকলো।
৩৬. ইবলিস বললো: হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে না মেরে ফেলে সৃষ্টিকুলের পুনরুত্থান দিন পর্যন্ত সুযোগ দিন।
৩৭. আল্লাহ তা‘আলা তাকে বললেন: নিশ্চয়ই তুমি সেই সুযোগপ্রাপ্তদেরই একজন। যাদের মৃত্যুকে দেরি করা হয়েছে।
৩৮. এমন সময় পর্যন্ত যখন সকল সৃষ্টি প্রথম ফুৎকারের সময় মরে যাবে।
৩৯. ইবলিস বললো: হে আমার প্রতিপালক! যেহেতু আমাকে আপনি পথভ্রষ্ট বলে সাব্যস্ত করেছেন সেহেতু আমি দুনিয়াতে তাদের সামনে গুনাহগুলোকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করবো। আর আমি তাদের সবাইকে সঠিক পথ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করবো।
৪০. তবে আপনার বান্দাদের মধ্যকার যাদেরকে আপনি নিজ ইবাদাতের জন্য চয়ন করেছেন তাদেরকে নয়।
৪১. আল্লাহ তা‘আলা বললেন: এটি হলো আমার দিকে পৌঁছানোর সঠিক পথ।
৪২. নিশ্চয়ই আমার খাঁটি বান্দাদেরকে পথভ্রষ্ট করার তোমার কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই। তবে যে পথভ্রষ্টরা তোমার অনুসরণ করে তাদের ব্যাপারটি ভিন্ন।
৪৩. নিশ্চয়ই জাহান্নাম ইবলিস ও তার সকল পথভ্রষ্ট অনুসারীর ওয়াদাকৃত স্থান।
৪৪. জাহান্নামের সাতটি দরজা দিয়ে তারা প্রবেশ করবে। প্রত্যেক দরজার জন্য ইবলিসের অনুসারীদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে যারা সেখান দিয়ে প্রবেশ করবে।
৪৫. নিশ্চয়ই যারা নিজেদের প্রতিপালকের আদেশ-নিষেধ মেনে তাঁকে ভয় করবে তারা থাকবে জান্নাত ও নির্ঝরিণীগুলোর মাঝে।
৪৬. প্রবেশের সময় তাদেরকে বলা হবে: তোমরা এখানে নিরাপদ ও আশঙ্কামুক্তভাবে প্রবেশ করো।
৪৭. আমি তাদের অন্তরের ঘৃণা ও শত্রæতা দূর করে দেবো। ফলে তারা পরস্পর ভালোবাসা নিয়ে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে সোফার উপর বসে থাকবে।
৪৮. তাতে কোন ক্লান্তি তাদেরকে স্পর্শ করবে না। না তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হবে। বরং তারা সেখানে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।
৪৯. হে রাসূল! আপনি আমার বান্দাদেরকে জানিয়ে দিন, নিশ্চয়ই আমি তাদের মধ্যকার তাওবাকারীর প্রতি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
৫০. আপনি তাদেরকে আরো জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয়ই আমার শাস্তি খুবই যন্ত্রণাদায়ক। তাই তারা যেন আমার ক্ষমা পাওয়া ও আমার শাস্তি থেকে নিরাপদে থাকার জন্য তাওবা করে।
৫১. আপনি তাদেরকে আরো জানিয়ে দিন ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) এর ফিরিশতা মেহমানদের সম্পর্কে। যাঁরা এসেছিলেন সন্তানের সুসংবাদ ও লুত (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায়ের ধ্বংস নিয়ে।
৫২. যখন ফিরিশতাগণ তাঁর নিকট প্রবেশ করলেন তখন তাঁরা বললেন: আপনার প্রতি সালাম রইলো। তিনি তাঁদের সালামের আরো সুন্দর উত্তর দিয়ে খাবারের জন্য তাঁদের সামনে একটি ভুনা গোবাছুর পেশ করলেন। তিনি মনে করলেন, তাঁরা মানুষ। যখন তাঁরা তা থেকে কিছুই খাচ্ছেন না তখন তিনি বললেন: আপনাদেরকে দেখে আমরা নিশ্চয়ই আশঙ্কিত।
৫৩. প্রেরিত ফিরিশতাগণ বললেন: আপনি ভয় পাবেন না। আমরা আপনাকে একটি আনন্দময় সুসংবাদ দেবো। অচিরেই আপনার একটি জ্ঞানী ছেলে সন্তান হবে।
৫৪. ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) সন্তানের সুসংবাদ শুনে আশ্চর্য হয়ে তাঁদেরকে বললেন: আমার এ বার্ধক্য ও বুড়ো বয়সে আপনারা আমাকে সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছেন। কীভাবে আপনারা আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন?
৫৫. প্রেরিত ফিরিশতাগণ ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) কে বললেন: আমরা আপনাকে নিঃসন্দেহে একটা সত্য সুসংবাদ দিয়েছি। তাই আপনি এ সুসংবাদের ব্যাপারে একটুও নিরাশ হবেন না।
৫৬. ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) বললেন: আল্লাহর সত্য পথ বিচ্যুতরা ছাড়া আর কেউকি তার প্রতিপালকের দয়া থেকে নিরাশ হয়?!
৫৭. ইব্রাহীম (আলাইহিস-সালাম) আবারো বললেন: হে আল্লাহর প্রেরিতজনেরা! আপনাদের খবর কী? আপনারা কী জন্য এসেছেন?
৫৮. প্রেরিত ফিরিশতাগণ বললেন: আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে একটি চরম বিশৃঙ্খল ও মারাত্মক খারাপ জাতি তথা লুত (আলাইহিস-সালাম) এর জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পাঠিয়েছেন।
৫৯. তবে লুত (আলাইহিস-সালাম) এর পরিবার ও তাঁর মু’মিন অনুসারীরা এ ধ্বংসের আওতায় আসবে না। আমরা তাদের সবাইকে এ ধ্বংস থেকে রক্ষা করবো।
৬০. কিন্তু তাঁর স্ত্রী। আমি তাকে ধ্বংসোন্মুখ বাকিদের অন্তর্ভুক্ত বলেই ফায়সালা করেছি।
৬১. যখন প্রেরিত ফিরিশতাগণ পুরুষের আকৃতিতে লুত পরিবারের নিকট আসলেন।
৬২. তখন লুত (আলাইহিস-সালাম) তাঁদেরকে বললেন: আপনারা তো অপরিচিত এক জাতি।
৬৩. প্রেরিত ফিরিশতাগণ লুত (আলাইহিস-সালাম) কে বললেন: আপনি ভয় পাবেন না। হে লুত! বরং আমরা আপনার সম্প্রদায়ের সন্দেহকৃত ধ্বংসাত্মক শাস্তি নিয়ে এসেছি।
৬৪. আমরা আপনার নিকট সত্য নিয়ে এসেছি। যাতে কোন ঠাট্টা-মশকারা নেই। আর আমরা নিজেদের সংবাদে নিশ্চয়ই সত্যবাদী।
৬৫. সুতরাং রাতের কিছু অংশ চলে গেলে আপনি নিজ পরিবারকে নিয়ে রওয়ানা করুন। আপনি তাদের পেছনে চলুন। আপনাদের কেউ যেন তাদের উপর নাযিলকৃত শাস্তি দেখতে পেছনের দিকে না তাকায়। আর আপনারা সেদিকেই চলুন যেদিকে চলতে আল্লাহ তা‘আলা আপনাদেরকে আদেশ করেছেন।
৬৬. আর আমি ওহীর মাধ্যমে লুত (আলাইহিস-সালাম) কে আমার ফায়সালা জানিয়ে দিয়েছি। আর সেটি হলো সকাল হলে এ সম্প্রদায়ের সবাইকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হবে।
৬৭. এদিকে সাদুম অধিবাসীরা সমকামিতার আশায় লুত (আলাইহিস-সালাম) এর মেহমানদের নিকট খুশিতে চলে আসলো।
৬৮. লুত (আলাইহিস-সালাম) তাদেরকে বললেন: এঁরা তো আমার মেহমান। তাই তাদের সামনে তোমাদের বদ ইচ্ছা প্রকাশ করে আমাকে লজ্জিত করো না।
৬৯. তোমরা এ সমকামিতা ছেড়ে আল্লাহকে ভয় করো। তোমরা বিশ্রী কাজ করে আমাকে লাঞ্ছিত করো না।
৭০. তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে বললো: আমরা কি আপনাকে ইতিপূর্বে কোন মানুষকে মেহমান বানাতে নিষেধ করিনি?
৭১. লুত (আলাইহিস-সালাম) তাঁর মেহমানদের সামনে তাঁর নিজের ওজরের কথা তুলে ধরে তাদেরকে বললেন: আমার এ মেয়েরা তোমাদের স্ত্রী হওয়ার উপযুক্ততা রাখে। তাই যদি তোমরা নিজেদের যৌন লিপ্সা মিটাতে চাও তাহলে তোমরা তাদেরকেই বিবাহ করো।
৭২. হে রাসূল! আপনার জীবনের কসম! নিশ্চয়ই লুত সম্প্রদায় উন্মত্ত নেশায় আত্মহারা হয়ে পড়েছে।
৭৩. ফলে সূর্যোদয়ের সময় আসতেই এক প্রচÐ ধ্বংসাত্মক ধ্বনি তাদেরকে আঘাত করলো।
৭৪. আমি তাদের এলাকাকে উপর-নিচ করে সম্পূর্ণ উল্টিয়ে দিয়ে তাদের উপর পাথুরে কাদামাটির প্রস্তরখÐ বর্ষণ করলাম।
৭৫. লুত সম্প্রদায়ের উপর নাযিল হওয়া উল্লিখিত ধ্বংসের মাঝে চিন্তাশীলদের জন্য অনেকগুলো আলামত রয়েছে।
৭৬. বস্তুতঃ লুত সম্প্রদায়ের এলাকাটি মানুষের চলার পথেই রয়েছে। যা তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া মুসাফিররা সহজেই দেখতে পায়।
৭৭. এ ঘটে যাওয়া বিষয়ে মু’মিনদের জন্য এক বিশেষ শিক্ষণীয় ব্যাপার রয়েছে।
৭৮. ঘন গাছ বিশিষ্ট এলাকার অধিবাসী শুআইব (আলাইহিস-সালাম) এর সম্প্রদায় আল্লাহর সাথে কুফরি ও তাঁর রাসূল শুআইব (আলাইহিস-সালাম) কে মিথ্যুক বানিয়ে নিজেদের উপর যুলুম করেছে।
৭৯. ফলে আমি তাদেরকে শাস্তি দিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেছি। নিশ্চয়ই লুত ও শুআইব সম্প্রদায়ের এলাকা একজন পথিকের সুস্পষ্ট পথেই রয়েছে।
৮০. হিজায ও শামের মধ্যবর্তী হিজরের অধিবাসী সামূদ সম্প্রদায় তাদের নবী সালেহ (আলাইহিস-সালাম) এর প্রতি মিথ্যারোপের মাধ্যমে মূলতঃ সকল রাসূলকে মিথ্যুক বানিয়েছে।
৮১. বস্তুতঃ আমি তাদেরকে তাঁর প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আনীত বিধানের সত্যতার ব্যাপারে অনেক দলীল ও প্রমাণ দিয়েছি। সেগুলোর একটি হলো উষ্ট্রী। তবে তারা এ প্রমাণগুলো থেকে শিক্ষা নেয়নি এবং সেগুলোর প্রতি কোন ভ্রƒক্ষেপই করেনি।
৮২. তারা পাহাড় কেটে নিজেদের ঘর বানিয়ে সেখানে নিরাপদে বসবাস করতো।
৮৩. এক সকালে শাস্তির এক মহা বজ্র ধ্বনি তাদেরকে পেয়ে বসলো।
৮৪. তারা যে ঘর-বাড়ি ও সম্পদ অর্জন করেছে তা তাদের থেকে আল্লাহর শাস্তিকে কখনোই প্রতিরোধ করবে না।
৮৫. আমি আকাশ, জমিন ও এতদুভয়ের মধ্যকার সবকিছু কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই অনর্থক তৈরি করিনি। আমি এ সবকিছু সত্যিকারার্থেই তৈরি করেছি। আর কিয়ামত আসা অবশ্যম্ভাবী। তাই হে রাসূল! আপনি মিথ্যারোপকারীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে ক্ষমা করুন।
৮৬. হে রাসূল! নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক সকল কিছুর ¯্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুই জানেন।
৮৭. আর আমি আপনাকে সূরা ফাতিহা দিয়েছি। যাতে সাতটি আয়াত রয়েছে এবং যেটিকে পুরো কুর‘আনুল-আযীম বলেও আখ্যায়িত করা হয়।
৮৮. আমি কিছু কাফিরকে যে নশ্বর ভোগ-বিলাসের সুযোগ দিয়েছি সেদিকে আপনি দৃষ্টি লম্বা করে তাকাবেন না এবং তাদের মিথ্যারোপের ব্যাপারেও আপনি চিন্তিত হবেন না। বরং আপনি মু’মিনদের জন্য বিন¤্র হোন।
৮৯. হে রাসূল! আপনি বলে দিন: আমি তো কেবল আযাব থেকে সুস্পষ্ট ভীতি প্রদর্শনকারী।
৯০. আমি তোমাদেরকে সেই আযাব নেমে আসার ভয় দেখাই যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবসমূহের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টিকারীদের উপর নাযিল করেছেন। যারা কিছুর উপর ঈমান আনে আবার কিছুর সাথে কুফরি করে।
৯১. যারা কুর‘আনকে বিভিন্নভাবে দুর্নাম করে বলে: এটি যাদু, জ্যোতিষ বিদ্যা কিংবা কবিতা।
৯২. হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের কসম! আমি কিয়ামতের দিন কুর‘আনের দুর্নামকারী ওই সকল ব্যক্তিকে অবশ্যই প্রশ্নের সম্মুখীন করবো।
৯৩. তারা দুনিয়াতে যে কুফরি ও পাপের কাজ করছে আমি সে সম্পর্কে তাদেরকে প্রশ্ন করবো।
৯৪. সুতরাং হে রাসূল! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যে জিনিসের প্রতি আহŸান জানানোর আদেশ করেছেন তাই আপনি সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করুন। মুশরিকরা যা করছে ও বলছে সেদিকে আপনি কখনোই দৃষ্টিপাত করবেন না।
৯৫. আপনি তাদেরকে ভয়ও করবেন না। নিশ্চয় আমিই কুরাইশ বংশের ঠাট্টাকারী কাফির নেতাদের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করার জন্য যথেষ্ট।
৯৬. যারা আল্লাহর পাশাপাশি অন্য মা’বূদকে গ্রহণ করে। তারা অচিরেই নিজেদের শিরকের নিকৃষ্ট পরিণতি জানতে পারবে।
৯৭. হে রাসূল! আমি নিশ্চয়ই জানি, তাদের মিথ্যারোপ ও ঠাট্টা আপনার হৃদয়কে ভীষণ কষ্ট দেয়।
৯৮. তাই আপনি আল্লাহকে তাঁর অনুপযুক্ত সকল কিছু থেকে পবিত্র ঘোষণা করা ও তাঁকে তাঁর সকল পূর্ণাঙ্গ বৈশিষ্ট্য দ্বারা প্রশংসার মাধ্যমে তাঁর আশ্রয় গ্রহণ করুন। উপরন্তু আপনি আল্লাহর ইবাদাতকারী ও তাঁর জন্য নামাযী হয়ে যান। কারণ, তাতেই রয়েছে আপনার হৃদয়ের কষ্ট দূর করার উপায়।
৯৯. আর আপনি সর্বদা নিজ প্রতিপালকের ইবাদাত করুন এবং মৃত্যু আসা পর্যন্ত যতক্ষণ আপনি বেঁচে থাকেন তার উপর অটল থাকুন।
Icon